হুগলি, ২১ নভেম্বর:- কথিত আছে, তৎকালীন ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন ইন্দ্র নারায়ন চৌধুরী। তিনি ছিলেন আবার নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। নজরানা দিতে অক্ষম হলে নবাব রাজাকে বন্দী করে নিয়ে যান। কারাবন্দী থাকার কারণে দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিজয়া দশমীর দিনে নৌকায় ফেরার পথে তিনি সিংহবাহনা এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় পরের মাসের শুক্লা পক্ষের নবমীর তিথির সময় জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজোর আয়োজন করার জন্য। সেই মতন চন্দননগরের গঙ্গা পাড়ের নিচুপট্টি, চাউলপট্টি এলাকায় নৌকা থামিয়ে এই পুজোর আয়োজন করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাকে সহযোগীতা করেন বন্ধু ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। অল্প সময়ে মধ্যে পুজো আয়োজন করার জন্য মহিলাদের বাদ দিয়ে চাউলপট্টি এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন পুজোর জন্য। শুরু হয় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর।
প্রথম পুজো থেকেই ওই পুজো সংকল্প হয়ে আসে ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের নামে। আগে তারা এই পুজোয় যোগ দিলেও, এখন আর এই পুজোতে আসেননা তারা। এখনো ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাড়ি রয়েছে চন্দননগরের সরিষাপাড়ায়। তবে তা জরাজীর্ণ অবস্থায়। সেখানে তার উত্তরসূরিরা বসবাস করেন। শোনা যায় পরের বছর থেকেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেবী প্রতিমার আরাধনা শুরু করেন নিজের রাজ বাড়িতেও। সেই প্রাচীন রীতিমেনেই আজও হয় চন্দননগরের সর্ব প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো। এখনো প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই এলাকার সমস্ত পুরুষরা মিলে এই পুজোর আয়োজন করেন। চার দিনব্যাপী চলে দেবী হৈমন্তিকার আরাধনা। পুজোর যে সমস্ত ফল প্রসাদ আসে সেগুলিকে পুজো উদ্যোগতারা বিলিয়ে দেন গরীব দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে এবং বাকি নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল গুলিতে রোগীদের দেওয়ার জন্য। জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত চন্দননগর। চন্দননগরের গঙ্গা পাড়ের প্রথম পুজো চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো বা আদি মায়ের পুজো। ১৭৬২ সালে আনুমানিক শুরু হয় এই পুজোর। জাঁকজমকপূর্ণভাবে উঁচু উঁচু প্রতিমার পুজো হয় গোটা চন্দননগর জুড়ে। শুরু হয়েছে চন্দননগরের সর্বাধিক প্রাচীন চাউলপট্টি আদি মায়ের মহা সামারহে শুরু হয়েছে মহা নবমীর পূজা অর্চনা।