কলকাতা , ২০ মে:- বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের বর্ষপূর্তির দিনে ফের এক সম্ভাব্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া দপ্তর। আগামী ২৬ শে মে নাগাদ ওই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আছড়ে পরতে পারে বলে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে।আবহাওয়া দপ্তর বৃহস্পতিবার জানিয়েছে উত্তর আন্দামানে এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর আগামী ২২ শে মে নাগাদ একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে চলেছে। তারপর ২৪ শে মে নাগাদ সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিবর্তিত হবে। তারপর ওড়িশা ও বাংলার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসবে। এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ২৫ তারিখ থেকেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে। যত সময় যাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তত বাড়তে থাকবে বলে জানা গেছে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে। আপাতত আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা এটাকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় হিসাবেই দেখছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্তি বাড়িয়ে এর প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল রয়েছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রথম দিকে অর্থাৎ ২৩ মে সমুদ্রের মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়ের বায়ুর গতিবেগ ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার থেকে ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তারপর সেই হাওয়ার গতিবেগ ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
তারপর ২৪ শে মে সেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ শক্তি বাড়িয়ে ৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।পরের দিকে এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কমলেও ২৬ তারিখ সকাল থেকে সেই ঘূর্ণি ঝড়ের দাপট আবার বাড়বে বলে জানা গেছে আওয়া দপ্তর সূত্রে। মৎস্যজীবী যারা ইতিমধ্যেই সমুদ্রে গেছেন তাদেরকে ২৩শে মে এর মধ্যে ফিরে আসতে বলা হয়েছে এবং ওই দিন থেকে কোন মৎস্যজীবীকে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। গত বছর মে মাসের ২০ তারিখ, ঠিক আজকের দিনেই রাজ্যে আছড়ে পড়েছিল প্রবল শক্তিশালী সাইক্লোন আমফান। এই ঠিক এক বছর পূর্তির দিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে “যশ” নামক সাইক্লোনের জন্য সতর্ক করতে হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, “গত বছর এক দুর্যোগ সালমলেছি। প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে দেখে চলে গেছেন। টাকা দেয়নি। আবার এই বছর একটা দুর্যোগ আসছে। বছর বছর এসব আসছে। আমি কাল বৈঠক করেছি। উপকূলের জেলাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। রিলিফ সেন্টারগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে দিঘা, মন্দারমণি ও উপকূলের জেলা গুলোকে।” রাজ্যের তরফে দু’ই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরকে সতর্ক করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সমস্ত জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সরকারী কর্মীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে।
এই বিপর্যয়ের ওপর নজর রেখে সঠিক সময় সঠিক বাযবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলিকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাখতে বলা হয়েছে চিড়া, গুড়, বেবি ফুড, জল, স্যানিটাইজার, জেনারেটার, রাখতে বলা হয়েছে। স্কুল, কলেজগুলিকে সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে কাজে লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় ২৪ ঘণ্টা সতর্ক করার কাজ চলছে প্রতিটি ব্লকে। রাখতে বলা হয়েছে প্রচুর মাস্ক। কেননা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় যখন হতেচলেছে ঠিক তখন রাজ্যে করোনা মহামারি রাজ্যের মানুষদের ওপর তীব্র আঘাত হেনে চলেছে। সমুদ্রে ও নদীতে যারা মাছ ধরতে যান তাদের নিষেধ করা হয়েছে। আগামী ২২ থেকে ২৬ মে এই পাঁচদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার উপকূলে অঞ্চলে তাণ্ডবলীলা চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে যশের। রাজ্যের তরফে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার এই নিয়ে জেলা শাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী উপকূলের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সাইক্লোন “যশ” প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক করেছেন।