হাওড়া,১৩ ডিসেম্বর:- ডিসেম্বর মাস আসলেই গ্রাম বাংলায় সার্কাসের তাঁবু বসতো। বাঘ-সিংহ, বিদেশি কুকুর, তোতাপাখি সহ একাধিক পশুপাখি নিয়ে রাশিয়ান সার্কাস, অজন্তা সার্কাস সহ বিভিন্ন সার্কাস কোম্পানি জমিয়ে খেলা দেখাত। উনিশ বছর আগে আদালতের একটি নির্দেশ সার্কাসের গৃহবন্দী জীবন থেকে মিলেছে হিংস্র প্রাণীদের মুক্তি। বাঘ, সিংহ উধাও হতেই সার্কাস দেখায় মানুষ মুখ ফিরিয়েছে। সঙ্কটে পড়েছে সার্কাস শিল্প। এমন একটি সময় গ্রাম বাংলায় স্থান করে নিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি মেলা। সার্কাস কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, হিংস্র প্রাণী ব্যবহারে আদালতের নির্দেশ জারি হতেই সার্কাস দেখা থেকে দর্শক বিমুখ হয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর দেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্ত সার্কাসে জোরালো ধাক্কা দিয়েছে। নোট বাতিলের কারণে অনেকটা সঙ্কটের সম্মুখিন হতে হয়েছে। সার্কাসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমায় বিদেশি দের এনে আধুনিকতার ছোঁয়া দেওয়া সম্ভবপর নয়। শিল্পীদের মাইনে, ত্রিপল, গাড়ি ভাড়া সহ আনুষাঙ্গিক খরচ মেটাতে গিয়ে বিদেশি শিল্পীদের মাইনে দেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। মাস খানেক আগে হাওড়ার সলপে বিধ্বংসী আগুনে ভস্মীভূত হয় সাকার্সের তাঁবু, পুড়ে মৃত্যু হয় একাধিক পাখির। এই ধরণের বিপর্যয় তো রয়েছে। সলপ, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা এলাকায় তাঁবু গড়া সার্কাস কোম্পানি বাধ্য হয়েছে অন্য শিল্পে নাম লেখাতে।
সার্কাসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমার মাঝেই খুশির খবর একটা রয়েছে। সার্কাসের হারানো সুরে দর্শকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে গ্রামীণ মেলা। গ্রামীণ হাওড়ার জয়পুর রাউতাড়া ফুটবল মাঠে শুরু হয়েছে হাওড়া জেলা সবলা মেলা ও ক্রেতা সুরক্ষা মেলা ২০১৯। এছাড়া পরিবেশ ও সংস্কৃতি মূলক দামোদর মেলা। ডোমজুড় বইমেলা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মেলা, বাগনান বইমেলা, শীতের মরসুমে একাধিক জায়গায় ফুলমেলা পাশাপাশি রয়েছে ধর্মীয় মেলা ও ধর্মনিরপেক্ষ মেলা। জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি হাওড়া উদ্যোগে এবং হাওড়া জেলা প্রশাসন ও আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির ব্যবস্থাপনায় রাউতাড়া রায় ব্রাদাস ফুটবল মাঠে প্রথমবার সবলা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের হাত ধরে উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য ছাড়াও ছিলেন আমতা–২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। মন্ত্রী জানান, স্বনির্ভরতার মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের প্রগতিশীল করে তোলা হবে। গ্রামীণ যুবক–যুবতীকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে।
জেলার ক্রীড়াবিদ অনিমেষ শাসমলের কথায়, হিংস্র প্রাণী না দেখিয়েও সার্কাসে দর্শক আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে শারীরিক কসরতের প্রদর্শনী, শিল্পীর কারুকার্য, প্রতিভার অবিশ্বাস্য কিছু কসরত সঙ্গে পাখি ও বিদেশি কুকুরের খেলা দেখালে আবারও সার্কাসের পুরনো গরিমা ফিরতেও পারে। একিসঙ্গে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার সদয় হলে শিল্পটা রক্ষা পাবে। নইলে ইউ টিউবে বিদেশের সার্কাস শিশুদের দেখাতে হবে।