এই মুহূর্তে কলকাতা

ভোট কেন্দ্রে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালনার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ কমিশনের।

কলকাতা, ১৫ এপ্রিল:- এবারের লোকসভা ভোটে ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালনার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, শীতলকুচির ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়ে কমিশনের এহেন পদক্ষেপ। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী আধিকারিক রাজ্যের প্রতি জেলার নির্বাচনী আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়েছেন। তাতেই বিষয়টি পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে। রাজ্যে কমিশন নিযুক্ত বিশেষ সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং বিশেষ পুলিস পর্যবেক্ষকের নির্দেশ মতোই এই আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে বলে রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী আধিকারিক উল্লেখ করেছেন।কেন্দ্রীয় বাহিনী কী কী করতে পারবে এবং কী কী পারবে না, তার পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, নির্বিচারে গুলি চালানো যাবে না। একমাত্র নিজেদের সুরক্ষা এবং ভোটকর্মী ও ইভিএমের নিরাপত্তায় ‘শেষ অস্ত্র’ হিসেবেই গুলি চালানো যাবে। একইসঙ্গে ভোটের ডিউটিতে বাংলায় আসা কেন্দ্রীয় জওয়ানদের জন্য যে নির্দেশিকাগুলি রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী আধিকারিক পাঠিয়েছেন, তা ইংরেজি ও হিন্দিতে ছাপাতে বলা হয়েছে।

নির্দেশিকা সংবলিত লিফলেট ছাপিয়ে তা জওয়ানদের মধ্যে বিলি করতেও বলা হয়েছে। আর সেই কাজ করতে বলা হয়েছে জেলা পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের তত্ত্বাবধানে। গুলি চালনায় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জওয়ানদের। যেমন-তাঁরা যেন কোনও প্রলোভনে পা না দেন, ভোটকর্মী বা অন্য কারও কাছ থেকে চা, সিগারেট প্রভৃতি কোনও কিছুই গ্রহণ না করেন, কারও প্রতি অনাবশ্যক ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ আচরণ করা যাবে না, খারাপ ভাষার ব্যবহার কিংবা অপ্রয়োজনে জুলুমও করা চলবে না কারও ওপর। একই সঙ্গে বিশেষ কোনও জনগোষ্ঠী, জাতি প্রভৃতির সঙ্গে অন্তরঙ্গতা প্রদর্শনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একজন ভোটারকে কারও পক্ষে ভোট দিতে বলাও জওয়ানদের জন্য দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায়, নিরাপত্তা প্রদান ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে অংশ নেবেন না কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।

সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা বুথের মধ্যেও প্রবেশ করতে পারবেন না। কার্যত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় শীতলকুচির ঘটনা ছাড়াও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে যা যা অভিযোগ উঠেছিল, অন্তত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তুলেছিল, কার্যত প্রায় তার সব কিছুই মেনে নিল কমিশন। যা কার্যত প্রমাণ করে দিচ্ছে, একুশের ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা এবং বাহিনীর জওয়ানদের আচরণ ও কাজকর্ম নিয়ে তোলা তৃণমূলের অভিযোগগুলি মিথ্যা ছিল না। অভিযোগের সারবত্ত্বা ছিল বলেই এবারে কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করল। উদ্দেস্য ২০২১ সালে কোচবিহারের শীতলকুচিতে ভোটের লাইনে থাকা নিরীহ ভোটারদের লক্ষ্য করে বিনা কারনেই গুলি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই ঘটনায় মারা যায় ৪জন। সেই ঘটনা বাংলার জনমানসে প্রভাব তো ফেলেইছিল, রাজনীতিতেও তার ছাপ পড়েছিল। দেশের ২৪’র নির্বাচনে সেই ধরনের ঘটনা যাতে আর নতুন করে না হয়, অন্তত বাংলার বুকে, এবার তার জন্য পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন।