এই মুহূর্তে জেলা

রীতি মেনেই ছট পুজোয় সামিল হুগলি জেলাবাসী।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১১ নভেম্বর:- হুগলি জেলা জুড়ে রীতি মেনে ছট পুজোয়া সামিল জেলাবাসী।মুলত হিন্দি ভাষী মানুষেরা এই পুজো অংশ গ্রহন করলেও উৎসবে সামিল হুগলি জেলার মানুষ। গঙ্গার নদীর ঘাট থেকে শুরু করে দামোদর, মুন্ডেশ্বরী,দ্বারকেশ্বর নদীর ঘাটগুলিতে ছট পুজো হতে দেখা যায়।ছট পুজোর দ্বিতীয় দিনে আরামবাগের দ্বারকেশ্বর নদীর ঘাটে ভোরবেলা ব্যাপক ভক্ত সমাগম হয় এবং সুর্যের পুজোপাঠ হয়।উল্লেখ্য ছটপূজা  হিন্দুবর্ষপঞ্জীর  কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত একটি প্রাচীন হিন্দু পার্বণ। সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। ছট পূজা সূর্য্য ও তার পত্নী ঊষার প্রতি সমর্পিত হয়। যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না।এই পূজার কখন উৎপত্তি হয়েছিল তার কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় না।

ঋগ্বেদের শ্লোকসমূহে সূর্য্যবন্দনার স্পষ্ট নিদর্শন আছে। ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে গ্রীক, রোমান, মিশরীয় ইত্যাদির সভ্যতাসমূহেও সূর্য্য মূখ্য দেবতা ছিলেন। সেভাবে ঊষাও বৈদিক দেবী। ভারতে সূর্য্যোপাসনার জন্য প্রসিদ্ধ পার্বণ হল ছট পূজা। এটি বছরে দুবার পালিত হয় — প্রথমবার চৈত্র মাসে এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসে।পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি তথা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভের জন্য এটি পালন করা হয়। নারী-পুরুষ সমানভাবে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ছট পূজায় কোনো মূর্তি উপাসনার স্থান নেই। এতে ডুবিত এবং উদিত সূর্যকে পূজা করা হয়।জানা গেছে, পূজার দুদিন আগে লাউ ভাত এবং একদিন আগে খির ভাত খাওয়ার সঙ্গে ৩৬ ঘণ্টার এক কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। পূজায় সম্পূর্ণ সাত্বিক নৈবেদ্য ইত্যাদি কুলো, ডলা বা পাচিতে রেখে উৎসর্গ করা হয়।

বিভিন্ন ফলমূল, মিঠাই ইত্যাদির সঙ্গে পরম্পরাগত বিহারী লোকখাদ্য “ঠেকুয়া” প্রস্তুত করে নৈবেদ্যরূপে প্রদান করা হয়।এই সময় নুন-মশলাবর্জিত সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়। পূজার শেষে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের প্রসাদ বিতরণ এই পূজার অন্যতম নিয়ম। বর্তমানে এই পূজা এক সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী, ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ এই পূজার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে পূজায় সামিল হতে শুরু করেছেন।আরামবাগ পৌরসভার প্রশাসক স্বপন নন্দীও ছট পুজোয় সামিল হন।তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এই বছরও সকলে মিলে আমরা ছট পুজোতে অংশগ্রহন করি।মুলত হিন্দিভাষী ভাইয়েরা ছট পুজো করলেও ছট উৎসবে সামিল হয়েছে আরামবাগবাসী। আরামবাগ পৌরসভার পক্ষ থেকে দ্বারকেশ্বর নদী ঘাট থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এদিন ভোর থেকেই ছটপুজোকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের উৎসাহ ছিলো বেশ চোখে পড়ার মতো।