এই মুহূর্তে জেলা

বিদ্যালয়ের ঠাকুর দালানে ১৫০ বছর ধরে মা দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে।

সুদীপ দাস , ৮ অক্টোবর:- ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়। হুগলীর বৈঁচিগ্রামের জমিদার বিহারীলাল মুখোপাধ্যায় তখন নিঃসন্তান। দেশব্যাপী তখন এই মুখোপাধ্যায় পরিবারের অগাধ সম্পত্তি। হুগলী জেলারই এক পরিচিত জমিদার বন্ধুর দৌলতে সেসময় পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাথে সাক্ষাৎ হয় বিহারীলালবাবুর। সম্পত্তির ভাগীদারের জন্য দত্তক সন্তানের কথা বলতে বিদ্যাসগর বেঁকে বসেন। এরপর ঈশ্বরচন্দ্রের কথামত বিহারীলালবাবু নিজের ঠাকুরদালান সহ বাড়ি এবং আশাপাশের কিছু এলাকা বিদ্যালয় তৈরীর জন্য দানপত্র করে যান। তৎকালীন ভারতবর্ষের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির কথা ভেবে অবশ্যই বিদ্যাসাগরের পরামর্শ মত সেই বিদ্যালয়ে যাতে পড়ুয়ারা নিখরচায় পড়তে পারেন সেজন্য বিদ্যালয় অবৈতনিক হবে এবং বৈঁচিগ্রামের একটি জায়গায় নিখরচায় হাসপাতাল হবে বলেই দানপত্রে ঘোষিত হয়। সেইমত বিহারীলালবাবু ১৮৭০ সালের ৯ই আগষ্ট উইল করেন।

বিধাতার পরিহাসে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৮৭৪ সালে বিহারীলাল দেহত্যাগ করেন। এরপর উইল অনুযায়ী ১৮৭৭ সালে বিহারীলালবাবুর বাড়িতে “বিহারীলাল মুখার্জীস ফ্রি ইন্সটিটিউসন” নামক বিদ্যালয় তৈরী হয়। সেই বিদ্যালয়ের ঠাকুর দালানে ১৫০ বছর ধরে মা দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে। বর্তমানে সেই বিদ্যালয় সরকারী পোষিত। তবে সমগ্র রাজ্যে বিদ্যালয়ে দুর্গা দালান সম্ভবত একটি মাত্রই রয়েছে। বিগত দিনের ইতোহাস নিয়ে এই বিদ্যালয়ের দালানে আজও দুর্গা পুজার পাশাপাশি সরস্বতী, লক্ষ্মী এমনকি দোল পুর্নিমা উপলক্ষেও পুজোপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি নিত্য পুজোও পালন করেন সেবাইত। পুজোপাঠ হলেও এখনও অবধি এই বিদ্যালয় কট্টর হিন্দুত্বের তকমা পায়নি, কারন এখানে পড়াশুনার জন্য আজও এলাকার সকল ধর্মের পড়ুয়ারা ভর্তি হন। তাঁরা সকলেই এই বিদ্যালয়ের পুজোপাঠকে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে সীমাবদ্ধ না রেখে, একে বিদ্যালয়টির জন্ম সংস্কৃতি হিসাবেই বিবেচনা করে চলেছেন। যে সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।