এই মুহূর্তে জেলা

বিশ্বকর্মা পুজোর আগে বিপজ্জনক চিনা মাঞ্জা নিয়ে সাধারণ সচেতন করল হাওড়া সিটি পুলিশ।

হাওড়া, ১৬ সেপ্টেম্বর:- ইতিমধ্যেই চিনা মাঞ্জায় ঘটে গিয়েছে বহু দুর্ঘটনা। কিন্তু তা সত্বেও সাধারণ মানুষের অনেকেরই এনিয়ে এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি। তাই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে বিপজ্জনক চিনা মাঞ্জা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এবার সচেতন করলেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। গত কয়েক মাসে কলকাতার মা উড়ালপুল থেকে শুরু করে দ্বিতীয় হুগলি সেতু, সাঁতরাগাছি ব্রিজে চিনা মাঞ্জায় ঘটে গিয়েছে বেশ কিছু দুর্ঘটনা। সেখানে অনেকেরই জীবনহানিরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যেহেতু বিশ্বকর্মা পুজো মানেই ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব তাই তার আগে এই বিপজ্জনক চিনা মাঞ্জার ব্যবহার বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয় হাওড়া সিটি পুলিশ। বুধবার তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে মানুষকে সচেতন করতে এক ফেসবুক লাইভের আয়োজন করা হয়। সেখানে আলোচনায় অংশ নেন এসিপি সেন্ট্রাল-১ মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। পুলিশের দাবি, এই চিনা মাঞ্জা বাজারে কম দামে পাওয়া যায়। সেই কারণে এই চিনা মাঞ্জা কেনার প্রবণতাও অনেক বেশি।

এদিনের ফেসবুক লাইভে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, চিনা মাঞ্জার আঘাতে শুধু মানুষের ক্ষতি নয়, পশুপাখির ক্ষতি হচ্ছে। চিনা মাঞ্জায় পাখি আটকা পড়ে আহত এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। এই চিনা মাঞ্জা বন্ধের ব্যাপারে পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকে এখনো পর্যন্ত হাওড়ার বিভিন্ন থানা এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ এই মাঞ্জা বিক্রি এবং মজুত রাখার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এই চিনা মাঞ্জা বিক্রি আটকাতে সব জায়গায় ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের তরফ থেকে ফেসবুকে জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী চিনা মাঞ্জা বিক্রি ব্যান করা হয়েছে। চিনা মাঞ্জা বিক্রি বা মজুত করা দন্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি চিনা মাঞ্জা বিক্রি বা মজুত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ (সরকারি আদেশ অমান্য করা), ৩৩৬ ধারার মতো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেবে।

এই মামলায় ধৃতদের তিন থেকে ছয় মাসেরও বেশি সময়ের কারাদণ্ড হতে পারে। চিনা মাঞ্জা যাতে ব্যবহার বন্ধ করা যায় তারজন্য নবান্ন সংলগ্ন ফ্লাইওভার, হাওড়ার ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোড, হাই রোড, বোম্বে রোড, সাঁতরাগাছি ব্রিজ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু প্রভৃতি জায়গাগুলোর আশেপাশে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। একমাত্র মানুষের সচেতনতা এবং যারা চিনা মাঞ্জা ব্যবহার করছেন তারা নিজে থেকে যদি এর ব্যবহার বন্ধ যদি করে দেন তাহলে সেটা সকলের পক্ষেই উপকার হবে। যতদিন পর্যন্ত তা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না বলে ফেসবুক লাইভে দাবি করা হয়। চিনা মাঞ্জার বিরুদ্ধে সকলকে এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এর পাশাপাশি কালিপুজোর সময় চাইনিজ ফানুসের বিপজ্জনক দিকও ফেসবুক লাইভে তুলে ধরা হয়। এই ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে জানানো হয় এই চিনা ফানুস ঠিকমতো উড়তে পারে না। হঠাৎ নিচে নেমে যায়।

এতে প্যান্ডেল, গাছপালা, বাড়িতে অথবা কোন কলকারখানাতেও পড়ে আগুন লেগে যেতে পারে। এছাড়া ফানুসে আগুন লাগানোর জন্য যে পদার্থটি ব্যবহার করা হয় তা থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। শুধু তাই নয় এই ফানুস সিন্থেটিক হওয়ায় পুড়ে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায় না। ফলে এটা পরিবেশের পক্ষেও ক্ষতিকর। সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের অনুরোধ এই মাঞ্জা বিক্রির বিরুদ্ধে সককে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি এই মাঞ্জা বিক্রির মতো অপরাধ করে তা পুলিশকে জানানোরও অনুরোধ করা হয় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি বিশ্বকর্মা পুজোর আগে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ বেআইনিভাবে চিনা মাঞ্জা বিক্রি এবং তা মজুতের বিরুদ্ধে হাওড়া গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করা করে বহু পরিমাণ চিনা মাঞ্জা।