এই মুহূর্তে জেলা

আরামবাগের সাগর কুঠিরের বেহাল দশা , বর্তমানে পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিনত হয়েছে।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১৭ আগস্ট:- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার ভুমিকা ছিলো অপরিসীম। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের নেতৃত্বে আরামবাগের ডোঙ্গল এলাকায় অবস্থিত সাগর কুঠির অহিংস আইন অমান্য আন্দোলনের পীঠস্থান হয়ে উঠছিলো। গান্ধীর নির্দেশ প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এখান থেকেই সারা হুগলি জেলায় আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বর্তমানে সেই সাগর কুঠিরের বেহাল দশা। পরিত্যক্ত এক বাড়িতে পরিনত হয়েছে। দেখাশোনার অভাবে অনাদরে পড়ে রয়েছে এই সাগর কুঠির।কোনও নথি সেই ভাবে সংরক্ষণ করা না থাকায় সব ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অভিযোগ। চারিদিকে আগাছা। গেট বন্ধ না থাকালে ভেতরে গরু, ছাগল চড়ছে। মাঝে নাকি মদ্যপদের আড্ডা খানায় পরিনত হয়েছিলো বলে দাবী স্থানীয় মানুষের।

তবে চারিদিকে দেয়াল দিয়ে বর্তমানে স্বাধীন সংগ্রামের জন্য যারা প্রান দিয়েছেন এই সাগর কুঠিরে থেকে তাদের স্মৃতি ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। অথচ ইতিহাসের পাতা ঘাটলেই এই সাগর কুঠিরকে কেন্দ্র করে প্রফুল্ল চন্দ্র সেন সারা হুগলি জেলা জুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে আরামবাগের বড়োডোঙ্গলে কংগ্রেসের এক সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়। প্রফুল্ল চন্দ্র সেন এই সমাবেশ থেকে ঘোষনা করেন যে,বড়ো ডোঙ্গল হবে হুগলি জেলার আইন অমান্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এই সময়ই সাগর কুঠির হয়ে ওঠে আরামবাগের আইন অমান্য আন্দোলন ও স্বাধীননতা আন্দোলন পরিচালনার পীঠস্থান। জানা গিয়েছে হুগলির ঘুঁটিয়া বাজারের বাসিন্দা সাগর লালা হাজরা ১৯২২ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের সাথে আরামবাগে আসেন এবং কংগ্রেসের গঠন মুলক কাজ ও অহিংস আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

কিন্তু তৎকালীন ইংরেজ পুলিশের নির্যাতনের জেড়ে আকস্মিক ভাবে তার মৃত্যু হয়। তার স্মৃতি রক্ষাথের্ই আরামবাগের ডোঙ্গলের গান্ধী আশ্রম সাগর কুঠিরে পরিনত হয় এবং সম্মেলনের সময় আনুষ্ঠানিক ভাবে তার উদ্বোধন হয়। এই সাগর কুঠির থেকেই কংগ্রেসের গঠন মুলক কাজ পরিচালনা হবার পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই রখম এক পবিত্র ভুমি চরম অমর্যাদায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় মানুষের দাবী, এই সাগর কুঠিরকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষনা করে সরকারি ভাবে সংরক্ষন করা হোক।প্রফুল্ল চন্দ্র সেন ও তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের নথি ও ঐতিহাসিক ভাবে মুল্যবান সামগ্রি দিয়ে মিউজিয়াম তৈরি করা হোক। কিন্তু সরকারে সদইচ্ছা না থাকায় কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে আরামবাগের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ দেবাশীষ শেঠ জানান, প্রথমে হুগলির বিদ্যামন্দির থেকে কংগ্রেসের আন্দোলন পরিচালিত হতো।

তবে প্রফুল্ল চন্দ্র সেন আরামবাগের ডোঙ্গল এলাকায় গান্ধী আশ্রম থেকে কংগ্রেসের গঠন মুলক কাজ শুরু করেন। কিন্তু সহকর্মী সাগরলাল হাজরার মৃত্যুর পর তার স্মৃতি উদ্দেশ্যে গান্ধী আশ্রম সাগর কুঠির হিসাবে উৎস্বর্গ করা হয়। এই সাগর কুঠির পরবর্তী কালে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রান কেন্দ্রে পরিনত হয়। এখান থেকেই হুগলি জেলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকে। সাগরকুঠির এই সব গৌরব জন আন্দোলনের সাক্ষী বলা যায়। অনেক আত্নত্যাগের এই স্থানকে সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে আরামবাগের নেতাজী মহাবিদ্যালয় প্রাক্তন অধক্ষ্য বিজয়কুমার ঘোষ জানান, সাগর কুঠির থেকেই আইন অমান্য আন্দোলন আরামবাগ মহকুমা তথা হুগলি জেলা জুড়ে বিস্তৃত্ব হয়েছিলো। সব মিলিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আরামবাগের সাগর কুঠিরকে কেন্দ্র করে আইন অমান্য আন্দোলনের এক গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত ছিলো। তাই এই রখম এক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যময় স্থানকে সরকারি ভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণের জোড়ালো ভাবে দাবী উঠছে।