কলকাতা , ৪ জানুয়ারি:- কোভিড আবহে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। দুর্গাপুজো নিয়ে যে ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন সেই অজয় দে গঙ্গাসাগর নিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের সঙ্গে তাঁর আর্জি গঙ্গাসাগর মেলা চত্বর ও বাবুঘাট এলাকাকে আগামী ১ মাসের জন্য কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করুক আদালত।আজ মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমত অবস্থায় এদিন গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালত যদি একান্ত্ই মেলার অনুমতি না দেয় সেক্ষেত্রে কী অবস্থান নেওয়া হবে মূলত সেই বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউ মুখ না খুলেলেও হাইকোর্টের রায় দেখে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ভাবনা-চিন্তা চলছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। একই সঙ্গে ভিড় কমাতে ভার্চুয়াল মেলা আয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।রাজ্যের মানুষকে এবার সাগরে না যাওয়ারই অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজ্য থেকে অতিথিরা আসুন। অনলাইনে স্নান দেখুন। জানা গিয়েছে, গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার পাশাপাশি মেলা চত্বর ও বাবুঘাট চত্বরকে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করার পাশাপাশি বেশ কিছু গাইডলাইনও দিতে আর্জি জানিয়েছেন মামলাকারী। মামলাকারী অজয় দে’র বক্তব্য, অতিমারি পরিস্থিতি এখনও কাটেনি।
করোনার ব্রিটেন স্ট্রেনও ইতিমধ্যেই চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাঁর আর্জি, বাবুঘাট চত্বরকেও কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করুক রাজ্য সরকার। কারন গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে মকর স্নানের আগে বাবুঘাট চত্বর কার্যত ‘মিনি গঙ্গাসাগর’-এ পরিণত হয়। কয়েক হাজার সাধু-সন্ত ভিড় জমান এখানে। তাঁদের আশীষ পেতে, দর্শন করতে সেখানে ভিড় জমান ভক্তরাও। এখান থেকেই ভিন্ন রাজ্যের পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি সাধুসন্তরা গঙ্গাসাগরের পথে যাত্রা করেন। কেউ আবার এখানেই থেকে যান মকরস্নান পর্যন্ত। সেই ভিড় ও জমায়েত ঠেকাতে আর্জি জানানো হয়েছে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবি রাধাকৃষ্ণণের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি দ্রুত শুনানির আর্জি জানান মামলাকারী। এরপরই আগামীকাল শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিকে আজই গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিশেষ বৈঠক করতে চলেছেন নবান্নে। সেখানে থাকবেন রেলের আধিকারিকেরাও। মূলত গঙ্গাসাগর মেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও যাতায়াত সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই এই বৈঠজ হবে নবান্নে। বৈঠক থাকবেন দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক ও প্রশাসনিক আধিকারি কেরাও। মকরসংক্রান্তির ভোরে পূণ্য স্নান হলেও দিন চারেক আগে থেকেই মেলা শুরু হয়ে যায়।
এই বছর ৮ জানুয়ারি সরকারি ভাবে মেলার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর থেকেই গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আদালতে দায়ের হওয়া মামলার জেরে এখন এই মেলাই চূড়ান্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষে জানিয়ে দিয়েছে, এবারে মেলার জন্য বাড়তি ১৫টি ট্রেন চালানো হবে নামখানা ও কাকদ্বীপ শাখায়। এখন দৈনিক এই শাখায় ৮৪টি ট্রেন চলছে। মেলার জন্য আগামী ৭ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ৯৯টি ট্রেন চলবে। শিয়ালদা স্টেশনের সাউথ সেকশানের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে কাকদ্বীপ ও নামখানাগামী যাবতীয় ডাউন ট্রেন ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারি অবধি ছাড়বে। আবার ১৩ থেকে ১৬ জানুয়ারি নামখানা ও কাকদ্বীপ থেকে আসা যাবতীয় ট্রেন এই প্ল্যাটফর্মেই ঢুকবে। এই প্ল্যাটফর্মটি চওড়া হওয়ার পাশাপাশি তা হকার মুক্ত বলে এই প্ল্যাটফর্মটিকে ভিড় সামলাবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে এবারে কোভিডের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে রেল। এই বিষয়ে পূর্ব রেলের শিয়ালদা শাখার এডিআরএম এসএস প্রিয়দর্শী জানিয়েছেন, ‘গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রীদের এবার কোভিড পরীক্ষা দিয়ে তবেই ট্রেনে চড়তে হবে।
এজন্য শিয়ালদহ স্টেশনে কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। শিয়ালদহ, নামখানা, কাকদ্বীপ তিন জায়গাতেই শরীরের তাপমাত্রা নেওয়া হবে। থাকবে আইসোলেশন সেন্টার। সন্দেহজনক হলেই পাঠানো হবে হাসপাতালে। এজন্য তিন জায়গাতেই অ্যাম্বুল্যান্স থাকবে। ব়্যাপিড টেস্টে উত্তীর্ণদেরই ট্রেনে চড়ার অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তীর্থযাত্রীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে যাতে টিকিট কাউন্টারে ভিড় না হয় তার জন্য নামখানায় দু’টি ও কাকদ্বীপে বাড়তি তিনটি বুকিং কাউন্টার খোলা হবে। দু’টি স্টেশনের ভিতর ও বাইরেও বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিছন্নতার জন্য বাড়তি সাফাই কর্মী সেখানে মোতায়েন করা হচ্ছে। অস্থায়ী সহায়তা কেন্দ্রও তৈরি করা হচ্ছে। থাকবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।’