এই মুহূর্তে জেলা

শেওড়াফুলি নিস্তারিণী মায়ের হাতে খাঁড়া নেই , তার বদলে রয়েছে সোনার তরোয়াল।


হুগলি , ১৪ নভেম্বর:- বর্ধমান জেলার অন্তর্ভুক্ত শেওড়াফুলি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন রায়ের নাতি রাজা হরিশচন্দ্র বসবাস শুরু করেন বর্ধমানের নারায়নপুরে। মা দম্পক লতার আদরের দুলাল। হরিশচন্দ্র তিনটি রানি ছিল সর্বমঙ্গলা হরসুন্দরী, ও রাজবন। একদিন হরিশচন্দ্র রাগ করে তার প্রিয় ঘোড়াকে নিয়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি দিলেন। প্রায় ৭০ মাইল ঘোড়া ছুটিয়ে ভোরে ঘোড়া থামলো হুগলীর শ্রীরামপুরে। ঘুরে দেখলেন জমিদারির এলাকা। কান্ত হয়ে পড়লেন হরিশচন্দ্র। পূর্বপুরুষের দেবালয় মন্দিরের সিঁড়িতে বসে ঘুমিয়ে পড়লেন। আর সেই সময় তিনি শুনলেন কেউ বলছে তুমি শেওড়াফুলি চলে যাও। কেউ যেন বলছে গঙ্গার পশ্চিম তীরে মাটি খুললে পাওয়া যাবে দুটি পাথর সেই পাথর দিয়েই দক্ষিণা কালীর মূর্তি তৈরি করে আমার পুজো শুরু করো। ইতিমধ্যে হরিশচন্দ্রের ঘুম ভেঙে যায়। দেখেন মন্দিরের পূজারী সহ জমিদারের নায়কে।

ভোর বেলার স্বপ্ন তাদেরকে শোনান। সকল হতেই সকলে মিলে গঙ্গাতীরে হাজির হন। জ্যোতিষী গণনা করে একটি জায়গা ঠিক করলে সেখান থেকে কষ্টিপাথর উদ্ধার হয়। সেই থেকেই হরিশচন্দ্রের জীবন পাল্টে যায়। রাজা রূপে তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগে। বাংলার ১২৩৪ সালের জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা পঞ্চমী সেই দিনটি ছিল। জৈষ্ঠ শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে কালী মূর্তির প্রতিষ্ঠিত হল। তিনি নাম রাখলেন শ্রীশ্রী নিস্তারিণী দক্ষিণা কালী মাতা। যা এখন নিস্তারিণী কালীবাড়ি নামে সবাই চেনে। নিজেই ইষ্টমন্ত্র সহ দেবীর ধ্যান মন্ত্র লিখে মায়ের পুজোর ব্যবস্থা করলেন। হরিশচন্দ্রের ভক্তির টানে মা আজও জাগ্রত। তিনি এখন নিস্তারিণী কালী রূপে বিরাজ করছেন। নিস্তারিণী মায়ের হাতে খাঁড়া নেই, তার বদলে রয়েছে সোনার তরোয়াল। কারণ মা এখানে রাজমহিষীর প্রতিরূপ।

তরোয়াল রাজ্য শাসনের প্রতীক। এই মন্দিরে আছেন গৃহদেবতা, মাতা মহিষমর্দিনী এবং অন্নপূর্ণার মন্দির। কথিত আছে রানী রাসমণি অদ্ভুতভাবে মায়ের দর্শন পায়। গঙ্গাবক্ষে বজরা করে যাওয়ার সময় শেওড়াফুলি ঘাটের সামনে এলে একটি” ন “বছরের বালিকা চিৎকার করে রাণীকে জিজ্ঞাসা করেন তোমরা কোথায় যাবে। রানিমা উত্তরে বলেন শেওড়াফুলি নিস্তারিণী মাকে দর্শন করতে যাচ্ছি। বালিকাটি বলেন তোমরা ঠিকই জায়গায় এসেছো। এই ঘাটেই নামো। আমি মন্দিরে রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছি। রানিমা নামার পর মেয়েটি তাদের পথ দেখিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। রাজপরিবারের তত্ত্বাবধানে বিশেষ পুজো হয় মন্দির প্রতিষ্ঠার দিনে। কৌশিকি আমাবস্য ধুমধাম করে পুজো হয়। হুগলী জেলা সহ অন্যান্য জেলা থেকে ভক্তরা পূজো দিতে আসেন এখানে। মনস্কামনা জন্য আরাধনা করেন। নিত্যদিন চলে নিস্তারিণী মায়ের পুজো। মন্দির খোলা হয় সকাল ৬ টায়, বন্ধ হয় দুপুর ১ টায়। আবার বিকেলে ৪ টের সময় মন্দির খোলা হয় বন্ধ হয় রাত্রি ৯ টায়।