হুগলি, ১৩ জানুয়ারি:- এ বারও পুজোতে ভালই আনন্দ করেছিল উমা। কিন্তু শীতের উৎসব মরশুমে গা ভাসাতে পারেনি সে। কারণ, মাধ্যমিক পরীক্ষা। দিনের বেশিরভাগ সময় মাটির ঘরে বসে বছর পনেরোর উমার চোখ ছিল বইতে। পড়ার ফাঁকে ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দ কানে আসতেই খোলা চোখে স্বপ্ন দেখত সে। সেও বড় হবে। হয়তো ট্রেন চালাবে কিংবা ট্রেনের মতোই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাবে। কিন্তু গত ১১ তারিখ থেকে সে সব স্বপ্ন চুরমার হয়েছে তার। রেলের লোকেরা এসে এক লহমায় তার মাটির ঘর মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। পড়ার বইগুলিও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। অসহায় উমার কান্না তখন থেকে যেন থামবার নয়। এতদিন নাগালে না আসা টিনের চাল আজ উমার পায়ের নিচে। কিন্তু এ তো চায়নি সে। উমার জন্মের আগেই তার দিনমজুর বাবা হুগলির পান্ডুয়া ব্লকের খন্নান স্টেশনের কাছে রেলের জমিতে এক চিলতে ঘর করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি উঠে যাওয়ার জন্য রেলের কড়া নির্দেশ ছিল।
তবে, সরে যেতে পারেননি। তাই রেলের বুলডোজার তাঁদের বাড়ির উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। আর সেই বুলডোজারের নীচে শায়িত হয়েছে উমার যাবতীয় স্বপ্ন। উমা এখনও আগের মতোই স্বপ্ন দেখতে চায়। তাই খোলা আকাশের নিচে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আকাশের নিচে এই লড়াই যে বড় কঠিন! তাই সরকারি সহযোগিতার দিকে চেয়ে উমার বাবা। রেল কিংবা যে কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজের জায়গার দখল নিতেই পারে। না সরলে নিয়ম মেনে বলপ্রয়োগও করতে পারে। সব ঠিক আছে। কিন্তু উমা তো কোনও দোষ করেনি। ও তো সামাজিক নিয়ম মেনেই স্বপ্ন দেখছিল। তাই উমাদের বই পড়া যাতে বন্ধ না হয়, উমারা যাতে বাল্যবিবাহের শিকার না হয়, এ সব সমাজের কি ভাবার দরকার নেই? খন্যানের উমা কিন্তু ফের এই প্রশ্নটা তুলে দিল।