এই মুহূর্তে কলকাতা

শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিজেপি মুক্ত ভারত গড়ার ডাক মমতার।

কলকাতা, ২১ জুলাই:- নতুন বিরোধী জোটকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি মুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন। শুক্রবার ধর্মতলায় দলের বাত্সরিক শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তিনি আগামী লোকসভা ভোটের রণকৌশল ঘোষণা করেন। জোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী সমভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়া নামে একটি জোট তৈরি করতে পেরেছে। গোটা ভারতবর্ষে এই ব্যানারেই লড়াই হবে। ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মমতা এদিন বলেন, “২৪ এর আগে ‘ইন্ডিয়া’ নামে জোট গড়তে পেরেছি। যা হবে এই ব্যানারে হবে। আমরা চেয়ারকে কেয়ার করি না। আমাদের চেয়ার চাই না। আমরা চাই বিজেপি দেশ থেকে বিতাড়িত হোক। আর বিজেপিকে নেওয়া যাচ্ছে না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা স্যালুট জানাই মণিপুরের মানুষকে। বাংলা ও ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে। বেটি বাঁচাও স্লোগান কোথায় গেল বিজেপি? আজ বেটি জ্বলছে। মণিপুরে, দেশে৷ বিলকিসের ওপর যারা অত্যাচার করেছিল, তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। বক্সারদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিলেন না। আর মণিপুরে এই অবস্থা। আগামীর ভোটে মহিলারা বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ পরপর পাঁচ বার আমরা প্রথম হয়েছি। ১০০ দিনের কাজ যা গরীব মানুষের জন্য তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলেছেন ২ অক্টোবর দিল্লতে ধরনা করব, প্রাপ্য না দিলে। আমাদের টাকা না দিলে, গান্ধীজীর জন্মদিনে আমরা সবাই দিল্লি যাব। রাস্তায় আটকালে যেখানে আটকাবে, সেখান থেকে দিল্লি যাব। ১০০ মিটার দূরে ব্লকে ব্লকে বিজেপি নেতার বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। যাতে বলতে না পারে আমরা অবরুদ্ধ করে রেখেছি। জবাব তোমাকে দিতে হবে। আগে দিল্লি থেকে টাকা নিয়ে আসো। বাংলাকে ভাতে মারা যাবে না।” একই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী একশ দিনের কাজ সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে রেখে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি জানিয়েছেন একশ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র না দিলে রাজ্যই নিজের তহবিল থেকে আংশিক ভাবে হলেও ওই প্রকল্প চালাবে। একই রকম আবাস যোজনার টাকা বন্ধ থাকায় ১১ লক্ষ্য প্রাপককে রাজ্য সরকারি তহবিল থেকে বাড়ি তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে এদিন এরকাধিক আন্দোলন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের বক্তব্য, জেলায়, বিধানসভায়, ব্লকে, পঞ্চায়েতে যেভাবে মানুষ সমর্থন করেছে মানুষের পঞ্চায়েত পাশে থেকেছে তা প্রণম্য। সাধারণ মানুষের কথায় এবার মানুষ প্রার্থীপদ দিয়েছে।

জিতিয়েছে মানুষ। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ। বিধানসভায় ১০ শতাংশের ব্যবধান ছিল। পঞ্চায়েতে ১৫ শতাংশের বেশি হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম ব্যবধান ৩০ শতাংশের বেশি হয়েছে। পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে আর ভারতীয় জুমলা পার্টি ইডি, সিবিআই, সংবাদমাধ্যম সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কারণ বিরোধীদের কাছে মানুষের সমর্থন নেই। অভিষেক আরও বলেন, আমরা ১০০ দিনের টাকা দিল্লির বুক থেকে টেনে আনবো। বাংলার প্রতি যে ধারাবাহিক নিপিড়ন, শোষণ, বঞ্চনা, অপমান- সেই বকেয়া বুঝে নিতে দিল্লি যাবেন তো! ২০১০ -এর ২১ শে জুলাই আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে আজকের সমাবেশ। ক্ষমতা আছে ভারতবর্ষের সঙ্গে লড়বে? জনতা যা বলবে সেটাই শেষ কথা। ২ লক্ষ ৬৪ হাজার জব কার্ড হোল্ডার যাদের জীবিকা নির্ভর করে ১০০ দিনের কাজের উপর। আগামীদিনে কৃষিভবনের বাইরে হবে ঘেরাও হবে। মমতার নির্দেশে ২ রা অক্টোবার দিল্লি চলোর ডাক দিলেন অভিষেক। ২১-শের মঞ্চ থেকে হুঙ্কার করে অভিষেক বলেন, আগামীদিনে বাংলার মানুষ দিল্লি গিয়ে নিজের অধিকার ছিনিয়ে আনবে।

নিজের অধিকারের স্বার্থে লড়বে। আগামী ৫ অগাস্ট শনিবার বিজেপির সমস্ত বুথ, অঞ্চল, ব্লক, জেলা থেকে রাজ্য শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ঘেরায়ও সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা গণ ঘেরাও। তবে বাড়িতে কোনও বৃদ্ধ মানুষ থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু বিজেপি নেতা বাড়ি থেকে বেরোবেও না ঢুকবেও না। কিন্তু গায়ে হাত দেবেন না। গণ ঘেরাও কর্মসূচি হবে। তারপর দিল্লি ঘেরাও হবে। সর্বশক্তি লাগিয়ে দেব। ট্রেনে করে বুকে আশা বেঁধে দিল্লি চলো। দেশজুড়ে ডবল ইঞ্জিন সরকার মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ছেড়েছে। দু-মাস আগে যখন এটা হচ্ছিল তখন মোদী-অমিত শাহ কর্ণাটকে নির্বাচনী বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এখনও মণিপুরের ঘটনায় কেউ শাস্তি পায়নি।রাজ্যের দাবি দাওয়া নিয়ে ২ রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তির দিনে দিল্লি গিয়ে ধর্ণা দেওয়ার কথা তিনি ঘোষণা করেছেন। সত্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিপুল সাফল্যে উজ্জীবিত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের আজকের সমাবেশ কে ঘিরে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক সকাল থেকেই দলে দলে মিছিল করে কর্মী সমর্থকরা ধর্মতলা চত্বরে পৌঁছে যান। বেলা বারোটা বাজার অনেক আগে থেকেই ওই চত্বর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মাঝখানে দফায় দফায়কয়েক পশলা বৃষ্টি হলেও তাদের উৎসাহে কোনও ভাটা পড়েনি।