এই মুহূর্তে জেলা

স্বাধীনতার আগে বন্ধ হওয়া রথের রশিতে টান পড়লো হুগলিতে।


দিব্যেন্দু মজুমদার, ২০ জুন:- ১৯৩০ সালে যখন হুগলিতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছিল বলাগড়ের মহীপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারপাড়া গ্রামের বৃন্দাবন পল্লীতে তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ২০০ বছরের রথযাত্রা। গ্রামের বহু মানুষ সেই সময় স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন বলে তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিল ব্রিটিশরা। মানুষ আতঙ্কে বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাদের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা। সেই রথের আজ কোনো অস্তিত্ব নেই। এবার সেই পুরনো ঐতিহ্যকে সাক্ষী রেখে পুনরায় নতুন করে শুরু হল কামারপাড়ার রথযাত্রা। তাই মঙ্গলবার রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বলাগড়ের কামারপাড়ার মানুষ মাতল উৎসবের আনন্দে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই রথের নামকরণ করা হয়েছে মহামিলন রথ। গ্রামবাসীদের বক্তব্য উৎসবের থেকেও বড় আজকে সেই ইতিহাসকে স্মরণ করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত বর্ণের মানুষ আজ এই উৎসবে সামিল হওয়ায় তারা রীতিমতো খুশি। প্রায় ৯০ বছর বাদে বন্ধ হয়ে যাওয়া রথযাত্রা নতুন করে চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে রীতিমতো আনন্দে গা ভাসান গ্রামবাসীরা। বলাগড়ের মহীপালপুর কামারপাড়া- বৃন্দাবন পল্লী একটি অতি প্রাচীন জনপদ। এক সময় এই গ্রামে রথযাত্রা ছিল তাদের হৃদয়ের উৎসব। গুপ্তিপাড়া মঠের অধীন ছিল এই কামারপাড়া গ্রাম। এই গ্রামে ক্যাপ্টেন ব্যানার্জীর হাত ধরে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল।

গ্রামের মানুষ সেদিন ক্যাপ্টেন ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণায় স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং ব্রিটিশদের নৃসংস অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। ফলে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা রথযাত্রা রথযাত্রা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। প্রায় দীর্ঘ ৯০ বছর এই রথযাত্রা বন্ধ থাকার পর বলাগড়ের অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায় নতুন করে এই রথযাত্রার ইতিহাসের খোঁজ শুরু করেন। গ্রামের একটি পুকুর থেকে পুরোনো রথের চাকাও উদ্ধার হয়। তবে পুরোনো রথ আজ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এরপর থেকেই এখানকার পুরনো দিনের মানুষ এই রথযাত্রা নিয়ে উৎসাহিত হন এবং চিন্তাভাবনা শুরু করেন নতুন করে যদি এই রথযাত্রা শুরু করা যায় তাহলে বলাগড়ের সভ্যতার ইতিহাস আরো সমৃদ্ধ হবে। এই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে উদ্ধারের পরই গ্রামেরই মাধব ব্যানার্জী সহ অন্যান্যরা রথযাত্রা পুনরায় চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হন। ইতিহাস গবেষক পার্থবাবু বলাগড়ের বিডিও নীলাদ্রি সরকার সহ বিভিন্ন প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন রথযাত্রা নিয়ে। এরপর প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার পরই শুরু হয়ে যায় রথযাত্রার তোরজোর। গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সৌরভ বিশ্বাস জানান প্রায় দুই মাস ধরে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯ টি চূড়া বিশিষ্ট ২২ ফুট উচ্চতার এই রথটি তৈরি করতে খরচ হয় এক লক্ষ টাকা। তবে এর বেশির ভাগ খরচ বহন করেছে গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্যাপ্টেন ব্যানার্জীর মেয়েরা রথের দড়িতে টান দিয়ে রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন। আর এই মহামিলন রথের যাত্রার সূচনার সঙ্গে সঙ্গে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনোৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা।