এই মুহূর্তে জেলা

আমফানের তিন বছর পার, ক্ষতিগ্রস্থ ঘরেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি পঞ্চদশীর।


হুগলি, ২0 মে:- প্রকাণ্ড সব বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা। চুঁচুড়া স্টেশন রোড ধরে বঙ্কিম কাননের সেই রাস্তা দিয়েই বেশ কিছুটা গিয়ে দুটি বাড়ির মাঝের সরু গলি পেরিয়ে পৌঁছতে হবে বৃদ্ধা মায়ারানি বিশ্বাসের একচিলতে ঘরে। প্রথমে ঘর খুঁজে না পাওয়ায় স্থানীয় একজন জানালেন, ডানদিকে মোড় নিয়ে সোজা তাকালেই দেখবেন সরু গলির শেষে একটি বাড়িতে বস্তা ঝুলছে সেই বাড়িটিই। বস্তাই বটে! ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের কোদালিয়া ১ পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা এই বাড়ির চালে বস্তা ঝোলাই দস্তুর। সেই দিন কাঠের উনুন থেকে আগুন লাগে এই বাড়িতে। বাড়ির চালে থাকা প্লাস্টিক পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেসময়ই আবাস যোজনার বাড়ির দাবি উঠেছিল। কিন্তু হয়নি। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় চালে নতুন প্লাস্টিক চাপলেও তা যথেচ্ছ হয়নি।

ফলে, ছেঁড়া-ফাটা বস্তা দিয়েই কোনক্রমে চাল ঢেকেছিলেন। ওই ঘটনার বছর খানেকের মধ্যেই ফের বিপত্তি। আমপানের তাণ্ডবে তখন ওই বাড়ির যা হওয়ার তাই হয়েছিল। চালের বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট ছিল না। ঘরময় বৃষ্টির জলে ডুবেছিল। আবারও সরকারি বাড়ি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আসে জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে। ঘরের হাল দেখতে এসেছিলেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও। কিন্তু সবশেষে পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ছাড়া কিছুই মেলেনি। এই ঘর ছুঁয়েই স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা তৃণমূলের ডলি ঘোষের বাড়ি।

তিনি বলেন, “সত্যিই ময়ারানির সরকারি বাড়ি পাওয়া উচিত। আমরা আপ্রাণ চেষ্টাও করছি। কিন্তু কেন জানি না এতবার আ আবেদনের পরও ওঁর নাম আসছে না।” শুক্রবার ওই ঘরে গিয়ে দেখা গেল ইট পাতা মেঝেতে বসে পড়ছে মায়ারানির নাতনি দেশবন্ধু গার্লস হাই স্কুলের মাধ্যমিকের ছাত্রী সুষমা মন্ডল। সুষমা জানায়, আগুন লাগার সময় আমরা ঘরে ছিলাম না। কিন্তু আমপানের কথা মনে করলে এখনও গা শিউরে ওঠে। ওইদিন আমরা চারজনই ঘরে ছিলাম। ঝড় উঠতেই মাথার প্লাস্টিক ছিড়তে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই তা উড়ে যায়। ওই অবস্থায় ঘরের এক কোনায় দিদা ও মা আমাদের তিন ভাই বোনকে আঁকড়ে ধরে বসে ছিল। ওই রাতের পর আজও যে আমরা বেঁচে আছি সেটাই অনেক। সরকারি ঘরের কথা বলতেই সুষমা বলে আজ অভিশপ্ত আমপানের তৃতীয় বর্ষপূর্তি কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি।