এই মুহূর্তে কলকাতা

কলকাতার অনুকরণে দিল্লিতেও বইমেলা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।

কলকাতা, ৩০ জানুয়ারি:- কলকাতা বইমেলার অনুকরণে দিল্লিতেও একটি বই মেলার আয়োজন করবে রাজ্য সরকার। সোমবার দুপুরে সল্টলেকের সেন্টাল পার্কে ৪৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার সূচনা করে একথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সেই বইমেলায় রাজ্যের সব জেলা অংশ নেবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বইমেলা প্রাঙ্গণ তার নিজস্ব ঠিকানা পেল। আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত, যখন সরকারে ছিলাম না তখন থেকে পরিচয় সুধাংশদা এবং দিলীপদার সঙ্গে। তাঁরা বইমেলার জন্য একটু জায়গা চেয়ে বেড়াতেন। একটু জায়গা দাও, একটু জায়গা দাও। এ বার সেই স্থায়ী জায়গা পেল বইমেলা। এই মেলা বিশ্বকে একজায়গায় করেছে। কম্পিউটারে অনেক কিছু শেখা যায়, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই বিস্ফোরণের যুগে দাঁড়িয়েও কলকাতা বইমেলার আবেদন আজও অমলিন। বরং তাকে ঘিরে আগ্রহ যে উত্তরোত্তর বাড়ছে, তার প্রমাণ বইমেলা। পাঠক বাড়ছে। বাড়ছে নতুন নতুন প্রকাশনাও। সুপার্ব, মার্ভেলাস বইমেলা। কলকাতার বইমেলা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। প্রকৃত অর্থেই এটা আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। বইমেলায় আসুন। ঘুরে দেখুন। কয়েকটা স্টল দেখে একটা জিনিসই মনে হল প্রথমে। এখানে করার ফলে আকর্ষণ যেমন বেড়েছে, জায়গাও বেড়েছে। অনেকটা জায়গা। এটা কিন্তু বড় কৃতিত্ব।

যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন, সেখানে জায়গা না থাকলে গুঁতোগুঁতি হয়ে যায়। ছোটো ছোট পাবলিশার্সের পাশে থাকুন। বড় লেখকদের থেকে ছোট লেখকদের গুণ কিন্তু কম নয়। লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব অনেক। আমি এখনও ছোট চার পাতার ম্যাগাজিন পড়ি। তাতে অনেক তথ্য থাকে।’ এবারের বইমেলায় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ৬টি বই প্রকাশিত হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই তিনি এদিন বলেন, ‘১২৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে আমার। ‘লহ প্রণাম’, ‘মহীয়সী’, ‘ছড়ায় ছড়ায়’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘স্যালুট’, ‘কবিতাবিতান’ এবার ইংরাজিতে। রাজনীতিবিদরা বই লিখতে পারেন না? সমাজ সংস্কারকরাও তো একাধিক বই লিখেছেন। আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ। আমার সবটাই কুৎসার আঙিনায়, অপপ্রচারের আলিঙ্গনে। কারও কারও পছন্দ নাও হতে পারে। তবে আমি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। সমালোচনার থেকে আমি শিখতে পারি। যে তোমায় খারাপ বলে বলুক, তুমি খারাপ বলো না। কিন্তু, আজকাল সমালোচনা একটু বেশিই হয়। একটা উইপোকা কামড়ালেও সেটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। অথচ কত ভালো ভালো বই লেখা হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও কথা হয় না।

নেগেটিভিটি একটা চিন্তাধারা হয়ে গিয়েছে। আমি বলব নেতিবাচক কথাবার্তা সরিয়ে রেখে আমাদের শান্তি এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার্থে এগিয়ে আসা উচিত। দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। গণতন্ত্র রক্ষার্থে আমাদের সরব হতে হবে। ইতিহাস, ভূগোল, মানুষের অধিকার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে। হেট স্পিচকে আমি তীব্র নিন্দা করি। সকলকে নম্র ভদ্র হতে হবে। সকলে সমালোচনা করার জন্য বসে আসে। কেউ ভাল কাজ করলে বলবে না। তবে সমালোচনা করতে তৈরি। সমালোচনা করলে খুশি হই। রোজ নতুন কিছু শিখি। আসলে সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেউ নয়, সমালোচনা থেকেই শিখি।’ দুর্ঘটনা এড়াতে বইমেলা প্রাঙ্গনে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে আরো সক্রিয় হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একজন সামাজিক জীব হিসাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও বই লিখতে পারেন বলে তিনি জানান। মঙ্গলবার থেকে বইমেলা সাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। মেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের মন্ত্রী মাকিয়া খোসে গালভেজ সালভাদোর, ভারতে স্পেনের রাষ্ট্রদূত খোসে মারিয়া রিদাও দোমিনগেজ, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় সহ অনান্যরা।