হুগলি, ১২ ডিসেম্বর:- ফেসবুকে একটি পোস্টই শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিহীন দাদার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে টেট পরীক্ষায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল বোন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে ত্রিবেণীর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাইওয়ানী দাস জানতে পারে কামারপুকুরের দৃষ্টিহীন এরশাদ করিমের হাতে অ্যাডমিট কার্ড এসে পৌঁছালেও তিনি রাইটারের অভাবে পরীক্ষা দিতে পারছেন না। পোস্ট দেখেই সাইওয়ানী তার বাবাকে বলে দৃষ্টিহীন দাদার স্বপ্ন সফল করতে সে রাইটার হতে চায়। এরপরই তার বাবা এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং রবিবার সেই দাদা রাইটার বোনের সাহায্যে হুগলি উইমেন্স কলেজে টেট পরীক্ষা দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এরশাদ জন্মান্ধ হলেও অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করার পর বর্তমানে তিনি বিএড করছেন। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে শিক্ষক হবেন। সকলের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেবেন। টেট পরীক্ষার জন্য আবেদন জানান। অ্যাডমিট কার্ড হাতে এসে পৌঁছায়। রাইটারের জন্য হন্যে হয়ে খোঁজ করলেও কোনো রাইটারের সন্ধান না পেয়ে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েন এরশাদ। বন্ধুর এই অবস্থা দেখে এরশাদের এক শুভানুধ্যায়ী ফেসবুকে রাইটারের খোঁজে একটি পোস্ট করেন। সেই একটি পোস্টই সাইওয়ানীর মনকে নাড়া দিয়ে যায়। এরপরই সাইওয়ানীর বাবা এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী টেট পরীক্ষায় কাউকে রাইটার হতে গেলে মাধ্যমিক পাস হলে তাকে রাইটার হিসেবে গণ্য করা হবে না। সাইওয়ানী আর কয়েক মাস বাদেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।
তাই যোগ্যতার বিচারে সমস্ত নথি খতিয়ে দেখে তাকে রাইটার নির্বাচিত করে। দৃষ্টিহীন দাদার টেট পরীক্ষায় রাইটার হতে পেরে খুশি সাইওয়ানী। সে জানায় দাদা তাকে কিভাবে রাইটারের কাজ করতে হবে সে বিষয়ে বুঝিয়ে দেয়। উত্তর পত্রে প্রশ্নের পাশাপাশি উত্তরের অপশনও দেওয়া থাকে। সে প্রশ্ন ও উত্তরের অপশনগুলি পড়ে শোনানোর পর দাদা উত্তর দেয়। আর দাদার দেওয়া উত্তর নির্ধারিত ঘরে লিখে দেয়। অন্যদিকে দৃষ্টিহীন এরশাদ জানান বোনের সাহায্য ছাড়া তার পক্ষে টেট পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হত না। তার বিশ্বাস এত মানুষ যখন তার পাশে আছেন তখন তিনি সফল হবেন। কে বলতে পারে একদিন এরশাদের শিক্ষার আলো আমাদের এই সমাজকে নতুন করে দিশা দেখাবে।