সুদীপ দাস, ৭ ডিসেম্বর:- চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে, অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে! বুধবার রবি ঠাকুরের এই গানেরই যেন বাস্তবায়ন ঘটল চন্দননগর কেএমডিএ পার্কে। বুধবার বিশ্ব কর্নিয়া দিবস। এই উপলক্ষ্যে শ্রীরামপুর আই ব্যাঙ্কের আয়োজনে দৃষ্টীহীন ছাত্র-ছাত্রীদের মন অলোকিত করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। উত্তরপাড়ার লুই বেল মেমোরিয়াল স্কুলের শ’খানেক দৃষ্টিহীন পড়ুয়া এদিন শ্রীরামপুর আই ব্যাঙ্কের হাত ধরে একটা দিনের জন্য আলোর ছোঁয়া পেল। এদিন কেএমডিএ পার্কে সারাদিন ধরে নিজেদের মত আনন্দে মেতে ওঠে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। সকলকে উৎসাহ দিতে এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন চন্দননগরের মহানগরিক রাম চক্রবর্তী।
লুই বেল স্কুলের বর্তমানদের পাশাপাশি প্রাক্তনীরাও এদিন আনন্দে গা ভাসান। একে অপরের হাত ধরে কখনও নাগরদোলায় দুললো তো কখনও নিজেদের মধ্যে চলল খুঁনসুটি। হাতের ছোঁয়ায় সবুজে ঘেরা কেএমডিএ পার্কের বিভিন্ন রাইড ও গাছগাছালি সনাক্ত করল পড়ুয়ারা। শ্রীরামপুর আই ব্যাঙ্ক ও উত্তরপাড়া লুই বেল মেমোরিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষের চোখের আলোয় পড়ুয়াদের মনে রংধনু প্রবেশ করল। বুধবার সারাটা দিন হইহুল্লোরের পাশাপাশি দুপুরে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন করা হল। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল আমেরিকার মহিয়সী কন্যা হেলেন কেলারের। নিউ ইয়র্কে দৃষ্টিহীন হেলেনের সঙ্গে বিশ্বকবির সাক্ষাৎ হলে কবি তাঁর হাতের ওপর আঙুল চালিয়ে নিজের কবিতা ‘পাঠ’ করে শোনান।
হেলেনও তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন “বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর আর ভালো জিনিসগুলোকে চোখে দেখা যায় না, স্পর্শও করা যায় না। সেগুলো উপলব্ধি করতে হয় হৃদয় দিয়ে।” হয়তো নিজের হাতে রবিঠাকুরের আঙুল চালানোর পরই অদৃশ্য অনুভূতি সম্পর্কে মত প্রকাশ করেছিলেন হেলেন। হেলেনের জীবন বড় কঠিন হলেও নিজ জীবনে বেশ কয়েকজনের ভালোবাসায় হেলেন বিশ্ববন্দিত হয়ে উঠেছেন। শ্রীরামপুর আই ব্যাঙ্ক ও উত্তরপাড়া লুই বেল স্কুল কর্তৃপক্ষের এহেন মহতি উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকলে আবারও হয়তো কোন হেলেন কেলারকে আমরা ফিরে পেতে পারি!