কলকাতা, ৮ অক্টোবর:- পুজোকে কেন্দ্র করে বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অতিমারীর কারণে দুবছর কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে এবার ফের স্বমহিমায় ফিরেছে দুর্গাপুজো।মানুষ শুধু দ্বিগুণ উদ্যমে উৎসবে সামিল হয়েছেন এমনটাই নয়। অর্থনীতির নিরিখেও এবারের পুজো অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা।প্রাথমিক হিসাব বলছে ২০২২ সালের দুর্গাপুজোকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেনের সীমা ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরের পুজোয় রাজ্যজুড়ে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের রুটিরুজির জায়গা করে দিয়েছে বাংলার সেরা পার্বণ। এবার রাজ্যে প্রায় ৪৫ হাজার পুজো হয়েছে। তার মধ্যে ৪ হাজারের বেশি পুজো হয়েছে কলকাতা ও শহরতলির বুকে। সেই সব পুজোয় স্পনসনরশিপ বাবদ এসেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। রাজ্য সরকারও পুজো কমিটিগুলিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে। পরপর দু’বছর কোভিডের কারণে নমো নমো করে আয়োজন করা হয় পুজোর। শুধু প্রতিমা বা প্যান্ডেল নয়, পুজোর সঙ্গে যুক্ত সবরকমের ব্যবসা মার খেয়েছিল সেইসময়।
কিন্তু এবার সেই না-পাওয়াকে যেন কড়ায়গণ্ডায় উশুল করেছে সাধারণ মানুষ। তার প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়। জামাকাপড়, জুতো ও অন্যান্য পোশাক সরঞ্জাম, খুচরো বাজার, হোটেল, রেস্তরাঁ, পরিবহণ, সিনেমা ও অন্যান্য বিনোদন, পণ্যের প্রচার, বিপণনসহ সর্বস্তরেই ভালো ব্যবসা হয়েছে এবার। তাই প্রাথমিক হিসাবেই ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। ২০১৩ সালে বাংলার দুর্গাপুজোর উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সর্বভারতীয় বণিকসভা অ্যাসোচাম।তাঁরা জানিয়েছিল, ২৫ হাজার কোটি টাকার দুর্গাপুজোর ব্যবসা প্রতি বছরে ৩৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সেই যুক্তিতে এখন তা ৭০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছনোর কথা। কোভিডের কারণে সেই বৃদ্ধি কিছুটা থমকালেও, চলতি বছরের পুজোতে ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসার আশা করাই যায়। সেই হিসাব যে নির্ভুল তা উঠে এসেছে নানা সমীক্ষার মাধ্যমে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে ২০১৯ সালে একটি সমীক্ষা চালায় ব্রিটিশ কাউন্সিল। তাঁরা জানায়, এখানে দুর্গাপুজো কেন্দ্রিক ব্যবসা হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকার। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের কর্মকর্তারাও জানাচ্ছেন, কলকাতা তথা রাজ্যের পুজো এবং তার সঙ্গে যুক্ত সামগ্রিক বাজারের হিসেব কষলে, তা সাধারণত ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এবার সেই অঙ্কই ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সামনেই লক্ষ্মী পুজো। তার আগেই ধরা পড়ল বাংলায় পুজোর বাণিজ্যে বসত করেন মা লক্ষ্মী।