এই মুহূর্তে কলকাতা

মাংকিপক্স থেকে আগাম সর্তকতা অবলম্বন রাজ্যের।

কলকাতা, ২৭ মে:- বিশ্বের বহু দেশে মাঙ্কি পক্সের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে ফের বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।যদিও এখনও পর্যন্ত এ দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার কোনও ঘটনা সামনে আসেনি তাও আগাম সতর্ক থাকার নীতি নিয়েছে এ রাজ্যের সরকার।আবার তামিনাড়ু, কেরালার মত রাজ্যে শিশুদের মধ্যে টম্যাটো ফ্লু নামের এক ধরণের জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। মাঙ্কি পক্সের প্রাদুর্ভাব রুখতে ইতিমধ্যেই বিশেষ সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে। সংক্রমণ রুখতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিটেন্ডেন্ট তথা ভাইস প্রিন্সিপাল, প্রতিটি জেলা ও স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কলকাতা পুরনিগমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিশেষ নির্দেশিকা পাঠিয়েছে।সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ওইসব পদাধিকারীরা যেন নিজ নিজ এলাকায় থাকা সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে সতর্ক করে দেন ও সব হাসপাতালেই যেন পৃথক আইসোলেশান বেডের ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখেন। পাশাপাশি কলকাতা বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দিয়ে আন্তর্জাতিক উড়ানের যাত্রীদের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মায় ইউরোপ ও এশিয়াও, বিশ্বের একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাঙ্কিপক্স রোগটা নতুন নয়। তবে এই রোগ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল না বিশ্ববাসীর। আফ্রিকাতে এই রোগের হদিস আগে মিললেও, ইদানীং এমন কিছু দেশে এই রোগ ছড়াচ্ছে, যা নিয়ে বিস্মিত গবেষকরা। কোভিডের হানা এখনও পুরোপুরি কাটেনি, তারই মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-ও। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ব্রিটেনে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ৭জনকে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার রিপোর্ট সম্প্রতি ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। ওই গবেষণা অনুযায়ী, এমন কিছু ‘অ্যান্টি ভাইরাল’ ওষুধ আছে যা প্রয়োগ করলে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলিকে প্রশমিত করা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, এই সব ওষুধের প্রয়োগ করে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন— এমনই দাবি গবেষকদের। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, রক্ত এবং লালারসের নমুনা পরীক্ষা করলেই শরীরে মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পিঠ ও গায়ে ব্যথার মতো লক্ষণ। হতে পারে কাঁপুনি ও ক্লান্তিও।

এর পর দেহের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। সঙ্গে ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে থাকে মুখে। ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ফোসকার মতো ক্ষত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে বেড়ে যেতে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা। শ্বাসনালি, ক্ষত স্থান, নাক, মুখ কিংবা চোখের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে সুস্থ ব্যক্তির দেহে। যৌন মিলনের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ অনেকটাই কোভিডের মতো এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে অনেক মানুষের শরীরে। যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই রোগ নিয়ে এখনই খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ দেখছেন না। তাঁদের মতে, এই রোগ কোভিডের মতো অতিমারির আকার নেবে না। কেননা, এই ভাইরাস মানুষের কাছে নতুন নয়। এটি ‘স্মল পক্স’-এর সমগোত্রীয়। কোভিডের মতো এই ভাইরাস ততটাও সংক্রমক নয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কাও কম।