কলকাতা, ১৯ এপ্রিল:- আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বুধবার। যদিও মঙ্গল সন্ধ্যাতেই ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের। করোনার কারণে দু বছর বন্ধ থাকার পর এবছর ফের দুদিনের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে। দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ কে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে এই সম্মেলনকে পাখির চোখ করেছে রাজ্য সরকার। তাজপুর সমুদ্র বন্দর, ডেউচা পাচামি কয়লা ভান্ডার, সিলিকন ভ্যালির মত বিভিন্ন প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলিকে সম্ভাব্য বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হবে। রাজ্য এবং দেশের নামজাদা বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ছাড়াও ৪০ টি দেশের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। শিল্প সম্মেলনের সূচনার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্য সরকারের তরফে নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে ইতিমধ্যেই শহরে আগত আমন্ত্রিত শিল্পপতি ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের সেখানে স্বাগত জানান। সম্মেলনে যোগ দিতে একদিন রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন দেশ-বিদেশের শিল্পপতি এবং বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন বাংলােশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশিষ্ট অতিথিদের সরকারের তরফে একটি প্রীতিভোজে আপ্যায়িত করা হয়।
অন্যদিকে নিউটাউনের ৩৬০০ আসনের ঝা চকচকে কনভেনশন সেন্টারকে নয়নাভিরাম ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।বুধবার শিল্প ও বানিজ্য সম্মেলনে থাকছেন না দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে এ বিষয়ে রাজ্যের তরফে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিশেষ কারণে এই সম্মেলনে থাকতে পারবেন না বলেই জানিয়েছে তাঁর দপ্তর। পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠানে মাত্র ছয়জন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস,চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য,শশী পাঁজা ও মলয় ঘটক কে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার মন্ত্রীদের নিজের এলাকায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন রমজান মাস,তাই রাজ্যে যাতে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকে সেই দিকেই নজর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাজপুর সমুদ্র বন্দর ও দেউচা পাঁচামির কথা রাজ্য বিশ্বের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরতে চায় এই বাণিজ্য সম্মেলনে।
অন্যদিকে এদিনই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের কয়েকজন মহিলার হাতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা প্রতীকি তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্যায়ে এই প্রকল্পে ২৩ লক্ষ মহিলাকে দিতে খরচ হবে ২৪০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, রাজ্যে শেষ শিল্প ও বানিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে দীঘায়। এরপর কোভিডের বা করোনার জন্য দুবছর হয়নি এই শিল্প ও বানিজ্য সম্মেলন। তাই দুবছর পর ফের বুধবার রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই শিল্প ও বানিজ্য সম্মেলন। জানা গিয়েছে চৌদ্দটি দেশের শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। যেখানে রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজ্যের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মউ সাক্ষরিত হতে চলেছে বলে ইতিমধ্যেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যে তৃতীয়বার বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন এবার তাঁর লক্ষ্য রাজ্যে শিল্প বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো, সেইদিকেই এগিয়ে যেতে এখন তৎপর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই দেউচা পাচামিতে বড় শিল্পের লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
নবান্ন সূত্রের খবর,শিল্প ও বানিজ্য সম্মেলন শুরুর চারদিন আগেই ব্রিটেন জানিয়ে দিয়েছে, লগ্নির গন্তব্য বাংলাই। এযাবৎ কালের সর্ববৃহৎ প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে ব্রিটেন, যে দলে থাকবেন তাবড় শিল্পপতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও চিনের প্রতিনিধিরাও মুখিয়ে বাংলায় বিনিয়োগে। বস্তুত, দেশের শীর্ষস্তরের শিল্পপতিরা ছাড়াও বিদেশ থেকে লগ্নির প্রস্তাব এখনই আসতে শুরু করেছে। বাংলা নতুন বছর যে বিনিয়োগের বছর হিসাবেই গণ্য হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত রাজ্যের শিল্প দপ্তরের আধিকারিকরাও। করোনা আবহ কাটানোর পর পশ্চিমবঙ্গেই দেশের মধ্যে প্রথম এমন সম্মেলন হতে চলেছে। অনেকটা সে কারণেও শিল্পপতিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বাংলাই। গতবার ৩৫টি দেশের মোট প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল প্রায় চার হাজার। এর মধ্যে বিদেশি প্রতিনিধির সংখ্যা ৪৫০ ছিল। এবার সেই সংখ্যা বাড়ছে। আগের পাঁচটি সম্মেলনে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে রাজ্যের। এখন দেখার এই করোনা আবহের পর এই শিল্প ও বানিজ্য সম্মেলন থেকে কতটা লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।