এই মুহূর্তে জেলা

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এক ঘন্টার মধ্যেই ব্যাবস্থা , হাসপাতালেই মাধ্যমিক দিলো বিথী।


সুদীপ দাস, ৯ মার্চ:- ছোট বোন সৃষ্টির সাথেই মাধ্যমিক দিচ্ছে বড় বোন বিথী। চুঁচুড়ার কাপাসডাঙ্গা সতীন সেন বিদ্যাপীঠের ছাত্রী এই বোনেদের মাধ্যমিকের সিট পরেছে হুগলী গার্লস হাই স্কুলে। মঙ্গলবার ইংরেজি পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রেই জ্বর আসতে শুরু করে বিথী বড়ালের। সেই অবস্থাতেই দাঁতে দাঁত কামড়ে পরীক্ষা দেয়। কারন ছোট বোন সৃষ্টি। একই কক্ষে থাকা সৃষ্টি দিদির শরীর খারাপের কথা জানতে পারলে তাঁরও পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হতেই বিথী দিদিমুনীদের ঘরে গিয়ে শরীর খারাপের কথা জানায়। এরপর ওই স্কুলের পক্ষ থেকেই বিথীর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়। পরে বাড়িতে এলে পুনরায় শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করায় বিথীকে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে তাঁর পরিবার। বিথী ও সৃষ্টির বাবা বীরেন বড়াল পেশায় দিনমজুর। মা শিল্পী বড়াল ট্রেনে হকারী করেন।

বাবা-মা দুজনেই চেয়েছিলো দুই মেয়ে পড়াশুনা করে মানুষের মত মানুষ হোক। কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাতেই যে বড় মেয়ের এভাবে বাঁধা আসবে তা ভাবেনি তাঁর পরিবার। রাতে হাসপাতালেই ব্যাস্ত ছিলো বড়াল দম্পতি। ভেবেছিলেন মেয়ের আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না। কিন্তু বুধবার সকালে ছোট মেয়ে সৃষ্টি তাঁর মাকে জানায় হাসপাতালে থেকেও অনেকে পরীক্ষা দিতে পারে। তাই একবার বিথীর বিষয়টি সতীন সেন স্কুলে গিয়ে জানানো হোক। ছোট মেয়ের কথাতে সকাল ১০টা নাগাদ সতীন সেনের প্রধান শিক্ষক তরুন কান্তি কুমারের সাথে দেখা করে বিষয়টি জানান মা শিল্পীদেবী। তরুনবাবু বিষয়টি জানতে পেরেই তড়িঘড়ি জেলা শিক্ষা দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই বিথীর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়।

এদিন চুঁচুড়া হাসপাতালে বসেই ভূগোল পরীক্ষা দেয় বিথী। গোটা প্রক্রিয়ায় সতীন সেন বিদ্যাপীঠ, হুগলী গালর্স হাই স্কুল, ব্রাঞ্চ গর্ভমেন্ট স্কুল, চুঁচুড়া থানা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোপরী হুগলী জেলা শিক্ষা দপ্তর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে একে অপরের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কাজ করেছে। বিথীর মা শিল্পী বড়াল বলেন আমরা সাদামাটা মানুষ। এত নিয়ম-কানুন কিছুই জানি না। কিন্তু সতীন সেনের হেডমাষ্টারকে বিষয়টি জানাতেই এত তাড়াতাড়ি মেয়ের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন আমি ভাবতেই পারিনি। দু চোখ ভরা জল নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই পাওয়ার আশা জাগায় হেড মাষ্টারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক তরুনবাবু বলেন বিগত দুবছর রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি। তাই সকলের একজোট প্রচেষ্টাতেই তড়িঘড়ি বিথীর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।