এই মুহূর্তে জেলা

আমি হাতজোর করছি আমি আর কিছু জানিনা; টিকিট নিয়ে চুঁচুড়ার বিধায়কের কাতর আবেদন সাংবাদিককে!

সুদীপ দাস,৭ ফেব্রুয়ারি:- এ যে সাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের গল্প “কুম্ভীর বিভ্রাট”! ডমরুর সাথে যখন কথোপকথন চলছে শঙ্কর ঘোষ আর লম্বদরের। ডমরুর কথায় কমিরের পেটে বয়স্ক মহিলা ঝুড়ির উপর বসে বেগুন বেচিতেছিলেন। চোখ ছানাবরা তখন শঙ্কর আর লম্বদরের। আরে কুমিরের পেটে বয়স্ক মহিলা বেগুন বেচেতেছিলেন। গল্পের শেষ লগ্নে ডমরুর তাঁর কথা সত্য প্রমানের জন্য যখন তালগাছের সমান কুমিরের ছোট্ট দাঁত দেখাইলেন তখন হতচকিত লম্বদর ও শঙ্কর ঘোষের প্রশ্নের উত্তরে ডমরুর বলিয়াছিলো অনেক মানুষ খাইয়া সে কুমীরের দাঁত ক্ষয় হইয়া গিয়েছিল। হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের টিকিট বন্টনের গল্প শুনলেও সাধারন তৃণমূল কর্মীদেরও শঙ্কর ঘোষ ও লম্বদরের অবস্থা হতে বাধ্য। পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট বন্টন নিয়ে সারা রাজ্যব্যাপী ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকলেও হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড যেন অনন্য। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার বিকেলের মধ্যে এই ওয়ার্ডে চরম চড়াই-উৎরাই। দুই মহিলা প্রার্থীকে নিয়ে চরম বিভ্রাট। বিগত ৪৮ঘন্টায় দুই মহিলাই আপাতত ২-২ ড্র! প্রথমে মনিদীপা সরকার তারপর রীতা দাস, ফের মনিদীপা সরকার হয়ে চতুর্থ লিস্টে আবার রীতা দাস। থুরি! লিস্ট বলা ভুল হবে। বহু প্রতিক্ষিত তৃণমূলের ১ম তালিকা একমাত্র বের হয়েছে দলের ওয়েবসাইটে। যা আজও বর্তমান।

দলের কথামত নাকি ২য় তালিকা বের হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম থেকে দলের দুই শীর্ষ নেতার সই সম্বলিত সেই তালিকা সংবাদমাধ্যমের হাতে এলেও ওয়েবসাইটে সেই তালিকা স্থান পায়নি। অথচ গুপচুপ ভাবে সেই তালিকাই নাকি চুড়ান্ত তালিকা। এমনটাই শোনা যাচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বদের মুখে। তবে কোথাও কোথাও আবার দলের জেলা নেতৃত্বরা ১ম তালিকাকেই মান্যতা দিয়ে কোন কোন প্রার্থীকে ভোটপ্রচারে নামতে বলেছেন। তেমনই একজন প্রার্থী হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের মনিদীপা সরকার। স্থানীয় তৃণমূল নেতা চঞ্চল সরকারের স্ত্রী মনিদীপা। শুক্রবার বিকেলে ১ম তালিকা (যা আজও তৃণমূলের অফিসিয়াল ফেসবুক সাইটে রয়েছে)-য় রয়েছে মনিদীপা সরকারের নাম। কিন্তু ঐদিন রাতেই নাকি তা পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে পাওয়া তৃণমূলের ২য় তালিকায় দেখা যাচ্ছে চুঁচুড়া পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে রীতা দাস বলে জনৈক মহিলার নাম। শনিবার সকাল পর্যন্ত যেই নামে কাউকে চেনেন না বলে চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার জানিয়ে দেন। দুপুরে অবশ্য সাংবাদিকদের ফোনের উত্তরে সেই বিধায়ক জানান রীতা দাস আসলে রীতা দত্ত।

২০১৫সালে যেই রীতা দত্ত চুঁচুড়ার ৭নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত প্রার্থী। তিনিই নাকি টিকিট পেয়েছেন। কিছুক্ষন পর আবার সাংবাদিকদের কাছে ফোনে বিধায়ক জানান ৭নম্বর ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী হলেন মনিদীপা সরকারই। ৭নম্বর ওয়ার্ডের কর্মীরাও বিধায়ক মারফত সে কথা জানতে পেরে দেওয়াল লেখা শুরু করে দেন। সেইমত ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মনিদীপা সরকারের নামে বেশ কয়েকটি দেওয়ালও লেখা হয়ে যায়। কিন্তু শনিবার বিকেলেই বেঁকে বসেন রীতা দত্ত। তিনি বলেন আমার বাপের বাড়ির পদবী দাস। সেই পদবীতেই আমি টিকিট পেয়েছি। রবিবার সকালে বিভ্রান্তি দূর করতে তিনি সোজা পৌঁছে যান কোলকাতায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি নিজের টিকিট নিশ্চিত করেছেন বলে দাবী করেন। প্রমান স্মরূপ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে থেকে একটি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছাড়েন।

এরপর সন্ধ্যায় এলাকায় ফিরে এসে রত্না দাস (দত্ত) দেওয়াল লিখতে শুরু করেন। তখন ৭নম্বর ওয়ার্ডের হয়ে একাধিক দেওয়ালে একাধিক তৃণমূল প্রার্থীর প্রার্থীর নাম। শুরু হয় চরম বিভ্রাট। এমন বিভ্রাট যে তা কাটাতে না পেরে স্বয়ং চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার সাংবাদিকের সামনে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। চুঁচুড়ার ৭নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে পরেছেন বিরোধীরাও। বিজেপির হুগলী সাংগঠনিক জেলা যুভমোর্চার সভাপতি সু্রেশ সাউয়ের কটাক্ষ তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে এমন বিভ্রান্তি যে স্বয়ং বিধায়কও বলছেন চুঁচুড়ার ৭নম্বর ওয়ার্ডে কে প্রার্থী আমি জানি না! দলকে জিজ্ঞাসা করুন। তাহলে বিধায়ক মহাশয়ও কি দলের বাইরে! সত্যি বাবা এ কেমন বিভ্রাট? নিন্দুকদের বক্তব্য এই না হলে তৃণমূল! এ তো কুম্ভীর বিভ্রাটের থেকে কোন অংশে কম নয়! মানুষ কাকে নির্বাচিত করবে তা জানা তো দূরের কথা, দল কাকে নির্বাচনের জন্য নির্বাচিত করবে সেটাই দলও জানে না!