এই মুহূর্তে জেলা

বৃদ্ধ দানবীর দম্পতির ভিটে দখল জমি মাফিয়াদের , নির্বিকার পুলিশ !

সুদীপ দাস, ২১ জানুয়ারি:- ব্যান্ডেল স্টেশন রোড ধরে সোজা করোলা মোড় থেকে করোলা কালিবাড়ির দিকে বাঁক নিয়ে বেশকিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর একটি বিশাল মাঠ শেষে দোতলা বাড়ি। পুরনো কড়ি বর্গার এই দ্বিতল বাড়িতেই বাস বৃদ্ধ দম্পতি গুরুচরন দাস(৮৬) এবং মায়ারানী দাস (৮১)-এর। পোলবা থানার অন্তর্গত এই করোলা এলাকা দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এলাকায় কয়েকবিঘা সম্পন্ন খেলার মাঠটিও এই দম্পতি দান করেছেন। দানবীর সেই দম্পতির বাড়িতে আনাগোনা লেগেই থাকতো গ্রামবাসীদের। সকলের সাথেই দম্পতির ছিলো সুমধুর সম্পর্ক। সকলের মধ্যেই দু’জন তপন চ্যাটার্জী ও রাজু কোলের কুনজর ছিলো ওই বাড়িতে। যা কোনমতেই বুঝতে পারেননি দম্পতি। দু’জনকেই নিজের ছেলের মত দেখতেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

২০২০-র শুরুর দিকে যখন দেশব্যাপী করোনার থাবা পরে তখন একমাত্র ছেলে সোমেন্দু দাসের কাছে চলে যান বৃদ্ধ দম্পতি। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি সুপারইনটেডেন্ট বছর ৫৬-র সোমেন্দুর ব্যান্ডেল কাজিডাঙ্গা এলাকায় নিজ বাড়ি রয়েছে। করোনার সময় যত্নের কথা ভেবে নিজের বৃদ্ধ বাবা-মাকে সেখানেই নিয়ে যান সোমেন্দুবাবু। আর গ্রামের ভিটে দেখভালের দ্বায়িত্ব পরে তপন ও রাজুর উপর। সুযোগ পেয়ে দানবীর দম্পতির সেই ভিটের দখল নেয় তপন-রাজু। পরবর্তীকালে বিষয়টি বুঝতে পেরে বহু অনুনয়-বিনয় করলেও বাড়ি নিতে এলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তপন ও রাজু জানিয়ে দেয় সেই বাড়ি তাঁদের দখলে। সেই মর্মে নাকি কাগজপত্রও করে নিয়েছে তারা। এরপর সোমেন্দুবাবু পোলবা থানার দ্বারস্থ হন। কিন্তু অভিযোগ ওই বাড়ি দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশও সেভাবে সহযোগীতা করেনি। অবশেষে বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ালো গোটা গ্রামের মানুষ।

গ্রামবাসীরাই সদলবলে ওই বাড়ি দখলমুক্ত করে দানবীর দম্পতিকে ফিরিয়ে দিলো। নিজেদের ভিটেতে ফিরতে পেরে বেজায় খুশি দম্পতি। তবে দুধ দিয়ে যে কালসাপ পুষেছিলেন সেটাও এই দু’বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তাঁরা। সোমেন্দুবাবুও বাবা-মাকে নিজেদের পছন্দের জায়গায় ফিরিয়ে দিতে পেরে বেশ খুশি। আর গ্রামবাসীরা! গ্রামবাসীদের বক্তব্য যারা আমাদের কথা ভেবে অত বড় খেলার মাঠ ছেড়ে দিলো তাঁদেরই কিনা ভিটে দখল! ভাবা যায়না। এবার থেকে এই দম্পতির বিপদে-আপদে আমরা থাকবো। পাড়ার উঠতি যুবক দীপক দাসের বক্তব্য দাদু-দিদা খুব ভালো মানুষ। অনেকদিন ঘরছাড়া ছিলো এবার থেকে আমরা দাদু-দিদার দেখভাল করবো। বাড়ির চৌকাঠে বসে গ্রামবাসীদের কথা শুনে তখন যেন একটা স্বস্তি এবং জয়ের হাসি গুরুচরন ও মায়ারানীর মুখে!