এই মুহূর্তে জেলা

হুগলির অন্যতম প্রাচীন রাস উৎসব পালিত হচ্ছে শ্যামবল্লভপুরে।


মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১৯ নভেম্বর:- হুগলি জেলার প্রাচীন রাস উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম হলো আরামবাগ মহকুমার গোঘাটের শ্যামবল্লভপুরের রাস উৎসব। হুগলি জেলার গোঘাটের এই জনপদটি প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের প্রাচীন। প্রাচীনকালে জলপথের মাধ্যমে যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো তখন থেকেই এই জনপদে রাস উৎসবের প্রচলন হয়। কিন্তু কিভাবে এবং কার হাত ধরে এই রাস উৎসবের প্রচলন হয় তা এখনও সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে প্রাচীন এই জনপদে এখনও রীতি মেনে রাস উৎসব হয়ে আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গ্রাম্য পরিবেশে মন্ডপ সজ্জা ও আলোক সজ্জায় সজ্জিত করে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহি রাস উৎসবের। এমনটাই জানালেন পুজো উদোক্তারা। রীতি মেনে পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি দেখা গেলো না শ্যামবল্লভপুরের রাস উৎসবে। উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে থেকেই পুজো করবেন তাঁরা। স্বাস্থ্য-বিধি মেনে বের হবে না শোভাযাত্রাও। জানা গিয়েছে আটদিন ব্যাপী যাত্রা পালাগান ও হরিরাম সংকৃত্তন হতো। এলাকা জুড়ে বসতো রাস মেলা।কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম হত মহকুমার এই প্রাচীন জনপদে।কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আটদিন ব্যাপী হরিনাম সংকৃত্তন হবে। যাত্রপালা গান একদিন করা হবে এবং ছোট ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অর্কেস্ট্রার ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান রাস উৎসব কমিটির সভাপতি প্রশান্ত পাত্র।

উল্লেখ্য রাস যাত্রা সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক উৎসব। রাস মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথাবস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় এবং কামপ্রবৃত্তিসমূহকে প্রেমাত্মক প্রকৃতিতে রূপ প্রদান করে অঙ্কন করা হয়েছে। এই রাস উৎসবে সমস্ত নিয়ম রীতি মেনে পুজো পাঠের আয়োজন হয় গোঘাটের শ্যাম বল্লভপুরে। এদিন এই রাস উৎসবের উদ্বোধন করেন এলাকার বিশিষ্ট মানুষ মুক্তিপদ কুন্ডু, রাধাবল্লভপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সেবা সংঘের মহারাজ পরম পুজ্যপাদ সুনিষ্ঠা নন্দজী মহারাজ। এই বিষয়ে রাস কমিটির সদস্য সঞ্জয় কুমার দোলুই জানান, এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে পুজোর আয়োজনে কাটছাঁট করা হয়েছে। সাধারণভাবে পুজো হচ্ছে। এই প্রথম প্রাচীন রাস উৎসব অনারম্ভর ভাবে হচ্ছে। ছোট ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সাতদিন ব্যাপী এই রাস উৎসব যাতে সুষ্ঠু ভাবে করা যায় সেই বিষয়ে সব রখম ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার এই প্রাচীন জনপদের রাস উৎসবকে ঘিরে এলাকার মানুষ উৎসাহ বেশ চোখে পড়ার মতোন এবং করোনা পরিস্থিতির সব রখম অন্ধকার ভুলে এলাকার মানুষ রাস উৎসবে সামিল হন।