মহেশ্বর চক্রবর্তী, ২৭ সেপ্টেম্বর:- ২৭শে সেপ্টেম্বর, ১৮৩৩ সাল ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়ের প্রয়ান দিবস। ১৮৮ তম প্রয়ান দিবসে সারা ভারতবর্ষের মানুষ এই মহান মনীষীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেই মতো হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের রাধানগর গ্রামে রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থানেও ভাবগম্ভীর পরিবেশে প্রয়ান দিবস পালিত হয়। এলাকায় বিশিষ্ট গুনিজনেদের উপস্থিততে ভারতের প্রথন আধুনিক মানুষের প্রয়ান দিবস পালিত হয়।এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাধানগর রামমোহন মেমোরিয়াল এ্যন্ড কালচার অরগানাইজেশান। তৎকালীন সময়ে ইংরেজ রাজত্ব ধীরে ধীরে ভারতবর্ষকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। সেই সময় বর্ধমান রাজার অধিনে একটা ছোট ও ঐতিহ্যবাহী গ্রাম ছিলো খানাকুলের রাধানগর। এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করলেন রাজা রামমোহন রায়।
এরপর তাঁর আলোয় আলোকিত হতে লাগলো বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষ। কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনে ব্রতী হলেন তিনি। শিক্ষা বিস্তার থেকে শুরু করে সমাজের কুসংস্কার দুর করে উন্নত সমাজ গঠন ও ভারতীয়দের মননের পরিবর্তন ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন রাজা রামমোহন রায়। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরুন বিশ্বের দরবারে। উল্লেখ্য রাজা রামমোহন রায় প্রথম ভারতীয় ধর্মীয় সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালী দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য তখন বৈষ্ণব বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরনে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত। তারই প্রতিবাদ করেন তিনি। অবশেষে তাঁরই প্রচেষ্টায় ইংরেজ সরকার আইন করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি ১৮২৮ সালে ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন।
পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে কাজ করে। এদিন রাধানগরে তাঁর প্রয়ান দিবসে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা সংগঠনের সভাপতি ডঃ পরেশ চন্দ্র দাস, প্রধান অতিথি হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি আলহাজ মেহেবুব রহমান, খানাকুল এক নম্বর ব্লকের বিডিও নবনিত মিত্তল পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি নইমুল হোক, প্রধান সঞ্জয় দোলুই, অধ্যাপক মইদুই ইসলাম, বাসুদেব বসু ও এই সংগঠনের সম্পাদক দেবাশীষ শেঠসহ অন্যান্য বিশিষ্ট মানুষ। এই বিষয়ে জেলাপরিষদের সভাপতি আলহাজ মেহবুব রহমান জানান, রাজা রামমোহন রায় ভারতের গর্ব। তাঁর স্মৃতি বিজারিত রাধানগরকে আরও উন্নত করে গড়ে তুলতে আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। রাজা রামমোহনের ভাবধারা ও আদর্শকে ছাত্র ও যুবক সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।অন্যদিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ দেবাশীষ শেঠ জানান, আজ রাজা রামমোহন রায়ের প্রয়ান দিবসে তাঁর স্মৃতি ও কর্মজীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। এই ধরনের মানুষের মৃত্যু নেই। ভারতবর্ষের মৃতপ্রায় মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন তিনি।ভারতের সকল স্তরের মানুষের কাছে তাঁর আদর্শ পৌঁছে দিতে চাই।