সুদীপ দাস, ২৭ সেপ্টেম্বর:- সেই কবে ডাচেরা চুঁচুড়ায় এসে তৈল চিত্র তৈরী করেছিলেন। পশ্চিমী শিল্প কলার নৈপুণ্যতার ছোঁয়া তখনই প্রথম পেয়েছিল ভারতবর্ষ। ইতিহাসের পাতায় থাকলেও বর্তমান প্রজন্ম তার কতটাই বা জানে? হুগলী জেলা বরাবরই শিল্প সমৃদ্ধে ভরা। ভরা শিল্পী সমৃদ্ধেও! জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শন বহু ইতিহাসের সাক্ষী। জেলার প্রান কেন্দ্র চুঁচুড়া শহরেও ঐতিহাসিক বন্দেমাতরম ভবন। গঙ্গার পশ্চিমপার নৈহাটি থেকে পূর্ব পার চুঁচুড়ায় এসে যে বাড়িতে থাকতেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই বাড়িই আজ বন্দেমাতরম ভবন নামে পরিচিত। চুঁচুড়ার জোড়াঘাটের এই বাড়িতে বসেই সহিত্য সম্রাটের কলম থেকে বেড়িয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শ্লোককগাথা “বন্দেমাতরম”। যে ধ্বনি উচ্চারন করে বহু বিপ্লবী হাসতে হাসতে ফাঁসিতে চড়েছেন।
কেউ বা বন্দেমাতরমের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েই হাসতে হাসতে ব্রিটিশ কামানের গোলার সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন। এবারে সেই বন্দেমাতরম ভবনেই শুরু হলো ফাইবার কাস্টিং মিউরাল আর্ট ফোরাম। আয়োজনে হুগলী-চুঁচুড়া আর্ট ফোরাম। সহযোগীতায় হুগলী-চুঁচুড়া পৌরসভা। উদ্দেশ্য শিল্পকলার মাধ্যমে নব প্রজন্মের মননে বঙ্কিম বীজ রোপণ। শনিবার থেকে এই কর্মশালা শিরু হলো। উদ্বোধনের দিন উপস্থিত হয়েছিলেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার, পৌরপ্রশাসক গৌরিকান্ত মুখার্জী, উপ-পৌর প্রশাসক অমিত রায় প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ। ফোরামের প্রায় ১৫ জন সদস্য সদস্যা ১৫ দিন ধরে ফাইবার কাস্টিং মিউরালের মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বঙ্কিমচন্দ্র ও বন্দেমাতরমের গুরুত্ব তুলে ধরবেন। পুজোর আগেই সাধারন মানুষ এই শিল্পকলার স্বাদ পাবেন বলে আশাবাদী আর্ট ফোরামের সদস্যরা। তবে তার আগে এখন যে কোন দিন বন্দেমাতরম ভবনে ঘুরতে এলে এই শিল্প তৈরীর মুহুর্তের সাক্ষী হতে পারবেন যে কেউ।
পাশাপাশি শিল্প মনষ্কা মানুষরা এসে শিল্পীদের কাছে তাঁদের ভাবনা প্রকাশ করারও সুযোগ থাকছে। কারন কর্মশালার মধ্য দিয়েই “বন্দেমাতরম” নামক এই ফাইবার শিল্প তৈরী হচ্ছে। আগামীদিনে চুঁচুড়ার অন্যান্য ঐতিহাসিক পটগুলিও শিল্পকলার মাধ্যমে তুলে ধরার ইচ্ছা ফোরামের। তবে তাঁর জন্য সরকারের এগিয়ে আসার প্রয়োজন বলে মনে করেন ফোরামের সদস্যরা। তবে তাঁদের আক্ষেপ কোলকাতার পাশাপাশি বর্তমানে কুচবিহার, মেদিনীপুরের মত জেলায় আর্ট গ্যালারি তৈরী হলেও সেই অর্থে হুগলীতে কোন আর্ট গ্যালারি নেই। তাঁদের আশা একদিন সরকারী সহযোগীতায় চুঁচুড়া শহরেও আর্ট গ্যালারি তৈরী হবে। যেখানে আগামি প্রজন্মের কাছে শিল্পকলার মাধ্যমে জেলার ঐতিহাসিক সংস্কৃতির নিদর্শন তুলে ধরতে পারবেন শিল্পীরা!