এই মুহূর্তে জেলা

সাপে কামড়ালে ঝাঁড়ফুঁক নয় , সঠিক সময়ে যেতে হবে হসপিটালে , ওয়ার্ল্ড স্নেক ডে তে এমনি বার্তা চিকিৎসকদের।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১৬ জুলাই:- ১৬ জুলাই ওয়াল্ড স্নেক ডে ( বিশ্ব সর্পদিবস)। সারা বিশ্বের সাথে সাথে ভারতবর্ষ জুড়ে পালিত হচ্ছে ওয়াল্ড স্নেক ডে। সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন সর্পবিশারদ তথা গবেষক ও বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা। তাদের দাবী, সাপে কামড়ালে ঝাড়ফুক বা গ্রামের হাতুরে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে যদি সঠিক সময়ে সরকারি হাসপাতালে সাপে কামড়ানো রোগিকে পৌঁচ্ছানো যায় তাহলে একশো শতাংশ রোগি বেঁচে যাবে। বর্ষা পড়তেই পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি হুগলি জেলাতেও সাপের কামড়ে বেশ কয়েক জন মানুষ মারা যায়। তাই এই দিনে সাপ সম্পর্কে মানুষের ভয় ভীতি দুর করার জন্য সর্প বিশারদরা জানান, বর্ষাকালে সাপ খাদ্যের সন্ধ্যানে লোকালয়ে বেশি আনাগোনা করে। তাই রাতের বেলা বেশি সাবধান হতে হবে।

গ্রামীন এলাকার মানুষকে রাতে দিকে হাতে টচ লাইট ও লাঠি নিয়ে চলাফেরা দরকার। ঘরের চারিদিকে কার্বলিক অ্যাসিড না ছড়িয়ে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো প্রয়োজন। অনেকের ভ্রান্ত ধারনা আছে যে, কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ালে নাকি সাপ চলে যায়। কিন্তু না। সাধারণ অ্যাসিড দিলে তো যে কোনও জন্তু ও প্রানী চলে যাবে। বাড়ি চারিদিকে সাপ আসা থেকে বিরত করতে হলে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে হবে। এমনটাই অভিমত সর্প বিশারদদের। পাশাপাশি সর্পঘাতের চিকিৎসকদের দাবী, সারা রাজ্যে বেশি মৃত্যু হয় চন্দ্রবোড়া ও রাসেল ভাইপার, কালাচ, কেউটে ও গোঘরো সাপের কামড়ে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা নাকি বেশি সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। এমনটাই নাকি গবেষণায় উঠে এসেছে। এই বিষয়ে বিখ্যাত গবেষক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ মনোজিৎ মুখার্জি জানানা, সাপ কামড়ালেই বিষক্রিয়া হবে তার কোনও মানে নেই। বিষক্রিয়ার বিষয়টি চিকিৎসক ঠিক করবেন।

অযোথা সময় নষ্ট করা চলবে না। তাই সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে সময় নষ্ট না করে সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে। বাড়িতে বরফ থাকলে তা দিয়ে দিতে হবে। ক্ষত স্থানের কিছুটা দুরে হাল্কা বাঁধন দিতে হবে। শক্ত ভাবে বাঁধন দেওয়া চলবে না। হিতে বিপরীত হবে। রক্ত সঞ্চালনটা সামান্য কমানোর জন্য হাল্কা বাঁধন দিতে হবে। কোনও ঝাঁড়ফুঁক বা ওঝার কাছে যাওয়ার দরকার নেই। রোগির মনে সাহস জোগাতে হবে। অনেক সময় মানুষ ভয়েই মারা যায়। সাপে কামড়ালেই মানুষ মারা যাবে না। এটা মানুষকে বোঝাতে হবে।আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সাপে কামড়ানো রোগি ১০০ % মানুষ বেঁচে যাবে। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা যায়। চিকিৎসক মনোজিৎ মুখার্জি আরও জানান, সাপে কামড়ানোর পর যদি সঠিকভাবে সাপ চিহ্নিত করা যায় তাহলে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়। তাই রোগির উপস্বর্গ দেখে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার। কোনও ভাবেই ওঝার কাছে যাওয়া চলবে না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হবে।অন্যদিকে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সোমনাথ দাস জানান, সাপ যথেষ্ট ভীতু প্রানী। সাপ কখনোই কামড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে লোকালয়ে আসে না।

খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঁধা পেলে তখন ভয় পেয়ে কামড়ায়। সাপের কামড় প্রতিরোধ করতে হলে গ্রামের মানুষকে বর্ষাকালে সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হবে। ঘরের মধ্যে মাটিতে না শোয়াই ভালো। কারন রাত্রে ইঁদুর ধরতে গিয়ে সাপ কামড়ায়। তবে সাপ কামড়ালে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে সাপে কামড়ানো মৃত্যু আটকানো যাবে। বর্তমানে সাপে কামড়ানোর বিষয় নিয়ে “অবিলম্বে ” বলে অ্যাপ আছে। এই অ্যাপে সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে। অপরদিকে বিশ্বসর্পদিবসে সর্পপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিং জানান, সাপকে ভালোবাসতে হবে। অযোগ্য আতঙ্কিত না হবে সাপে কামড়ালে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে মানুষ বেঁচে যাবে। সব মিলিয়ে এদিন সর্পদিবসে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাপকে হত্যা না করে বাঁচিয়ে রাখার বার্তা গবেষকদের। পাশাপাশি সাপে কামড়ালে ঝাড়ফুক বা ওঝার কাছে না গিয়ে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।