এই মুহূর্তে কলকাতা

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ কঠোর শাস্তির ইঙ্গিত দিয়ে জবাবদিহি তলব কেন্দ্রের।

কলকাতা, ২১ জুন:- রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে নিজেদের কঠোর মনোভাব অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাক্তন মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আগে আরও একবার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। কর্মীবর্গ দপ্তরের সোমবার তরফে চিঠি লিখে তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে আগামী ৩০ শে জুনের মধ্যে জবাবদিহি তলব করা হয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর গত ১৬ জুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে আলাপনবাবুর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পার্সোনেল অ্যান্ড পাবলিক গ্রিভান্স অ্যান্ড পেনশন মন্ত্রক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অল ইন্ডিয়া সার্ভিস (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড আপিল) আইনের আট নম্বর ধারা অনুযায়ী তাঁকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হোক।

কারণ তাঁর বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ আছে। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রাক্তন মুখ্যসচিব আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবেন ১৬ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে।কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে শো-কজ করা হয়েছিল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ৩১ মে ছিল তাঁর চাকরির শেষ দিন। সেদিনই আলাপন বাবুকে দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দিল্লি না গিয়ে সেদিনই অবসর নেন এই আমলা। রাজ্য সরকার তাঁর কর্মজীবনের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর কথা জানালেও, শেষপর্যন্ত আর বাড়তি সময় চাকরি না করারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি । সেদিনই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।পরের দিন থেকেই নতুন ভূমিকায় কাজ শুরু করেন তিনি।

মুখ্যসচিব থাকাকালীন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে বদলি করেছিল কেন্দ্র। সেই নির্দেশ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতর। কারণ, আইএএস অফিসাররা এই দফতরের আওতায় পড়েন। যার ভিত্তি ছিল ১৯৫৪ সালের ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাক্টের ৬(১) ধারা। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবসর নেওয়ার পর কর্মিবর্গ প্রশিক্ষণ দফতর আর এর মধ্যে নেই। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করে অমিত শাহর অধীনস্থ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। হাতিয়ার করা হয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ (বি) ধারাকে। যেখানে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার বা ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি বা স্টেট এক্সিকিউটিভ কমিটি বা জেলা কর্তৃপক্ষ বা এদের হয়ে দেওয়া নির্দেশ, কোনও কারণ ছাড়া অমান্য করার অভিযোগে, দোষী সাব্যস্ত হলে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে।

কেন্দ্রীয় সরকারের শো-কজের জবাব দেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আলোচনার পরে রিপোর্ট দিয়ে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে আসি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই আমরা বেরিয়ে আসি। এই মর্মে কেন্দ্রীয় আন্ডার সেক্রেটারি এ কে সিংহকে চিঠি দেন তিনি।যদিও আলাপনের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয় কেন্দ্র। কর্মিবর্গ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে মেজর পেনাল্টি প্রসেডিং শুরু হবে। সেই পেনাল্টি প্রসেডিং কেন নেওয়া হবে না তার উত্তর ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে । সামনাসামনি গিয়েও জানাতে পারেন, লিখিতভাবেও জানাতে পারেন আলাপন। আর যদি কেন্দ্রের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ না করেন, সেক্ষেত্রে নিয়মমতো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।