এই মুহূর্তে জেলা

পশু নয় , পায়ে দড়ি বেঁধে পেটের চিকিৎসা মানুষের। কাঠগোড়ায় বেসরকারী নার্সিং হোম।

সুদীপ দাস , ১০ জানুয়ারি:- একটু ভালো চিকিৎসার আশায় পেটের রোগ সারাতে গত মাসের ২৩ তারিখ চন্দননগরের একটি বেসরকারী নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছিলেন চুঁচুড়া তোলাফটকের বাসিন্দা শোভন সাঁধু (৬২)। চন্দননগরের নিউ ইউনাইটেড নার্সিং হোম তাঁদের নিয়ম মেনে শুরুতেই শোভনবাবুর করোনা টেষ্ট করান। ২৪ তারিখ আসা সেই রিপোর্টে দেখা যায় তিনি নেগেটিভ। এরপর ওই হাসপাতালের আইসিইউ-তে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। যদিও বিগত বছরখানেক ধরে ভূগতে থাকা প্রাক্তন বেসরকারী কর্মী শোভনবাবুর অর্থনৈতিক অবস্থাও প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। উল্টোদিকে নার্সিং হোমের বিলও চরচর করে বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়েই চলতি মাসের দু’তারিখ শোভনবাবুকে ওই নার্সিং হোম থেকে ছুটি করিয়ে চুঁচুড়া হাসপাতাল রোডের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে নিয়ে এলে Rapid টেষ্ট করতেই দেখা যায় শোভনবাবু করোনা পজেটিভ।

ওই নার্সিং হোম তড়িঘড়ি কাকলি দেবীকে জানিয়ে দেয় রুগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে। কারন সেখানে করোনা রুগীর চিকিৎসার ব্যাবস্থা নেই। এরপর কাকলি দেবী স্বামীকে নিয়ে চুঁচুড়া মল্লিক কাশেম হাটের অজন্তা সেবা সদন নামক করোনা হাসপাতালে চলে আসেন। সেখানে এসেও সরকারিভাবে টেষ্ট হওয়ার পর দেখা যায় শোভনবাবু করোনা পজেটিভ। কোথা থেকে স্বামী করোনা আক্রান্ত হলেন তা বুঝতে আর দেরী হয়নি কাকলি দেবীর। একাধারে পেটের রোগ তার উপর করোনা। দুটি রোগের চিকিৎসাই শুরু হয় অজন্তায়। এরপর হাসপাতালে পোশাক পরিবর্তনের সময়ই চোখ চড়কগাছ স্বাস্থ্য কর্মীদের। তাঁর হাতে রক্ত জমাটের পাশাপাশি একপায়ে দগদগে ঘা। শোভনবাবুকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান শুরুতে চন্দননগরের নিউ ইউনাইটেড নার্সিং হোম তাঁর হাত-পা বেঁধে চিকিৎসা শুরু করেছিলো। বারংবার বললেও প্রথম কয়েকদিন তাঁকে বাঁধনমুক্ত করা হয়নি। শোভনবাবুর কথামত তিনি পেটের যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন বলে নার্সিং হোমের এই বাঁধন-দবা।

সেই বাঁধনের ফলেই শোভনবাবুর হাতে রক্তজমাটের পাশাপাশি পায়ে দড়ি বসে গিয়ে দগদগে ঘা হয়ে গেছে। স্বামীর সেই ক্ষত দেখে দু’চোখে জল ধরে রাখতে পরেননি কাকলি দেবী। বর্তমানে তিনি এবিষয়ে সুবিচার চেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। অভিযোগ জানানো হয়েছে চুঁচুড়া সদর মহকুমা শাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। এবিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন আমি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে চন্দননগরের অভিযুক্ত নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি।