এই মুহূর্তে কলকাতা

ভোটের অগে ‘নেতাজী প্রীতি’ মমতার , ২৩ পালিত হবে দেশনায়ক দিবস।


কলকাতা , ৪ জানুয়ারি:- রাজ্য সরকার তেইশে জানুয়ারি দিনটি দেশ নায়ক হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ নবান্ন থেকে রাজ্য সরকার গঠিত এই সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। পরে কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়িয়ে তিনি আরো একবার ২৩ জানুয়ারি দিনটি জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি জানান। সুভাষচন্দ্র বসু কে সম্মান জানাতে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এনসিসির পাশাপাশি আজাদ হিন্দ বাহিনী তৈরি করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এই দিনের বৈঠকে তিনি রাজারহাটে নেতাজির নামে একটি আজাদ হিন্দ বাহিনী মনুমেন্ট তৈরির প্রস্তাব দেন। নেতাজিকে সম্মান জানাতে স্কুল স্তরে তরুণের স্বপ্ন বইটি সিলেবাসে যুক্ত করার কথা বলেন তিনি।

এবছর ২৩ জানুয়ারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মদিন। সেই দিনটিকে কীভাবে উদযাপন করা হবে তা ঠিক করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারপার্সন করে একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। সেখানে ঠাঁই পেয়েছেন যেমন নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় তেমনি জায়গা পেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মমতা শংকরেরা। আছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, আবুল বাশার, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, ব্রাত্য বসু, শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরী, অর্পিতা ঘোষেরা। আবার আছেন অধ্যাপক সুগত বসু, সুমন্ত্র বসু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখরা। রয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। এদের সবাইকে নিয়ে এদিন নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বেশিরভাগই এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু ঘোষণা করেন।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি এর আগে কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষণা করতে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার এখনও তা করেনি। এবারেও তিনি এই দাবি নিয়ে চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন। এবারেও যদি কেন্দ্র এই ঘোষণা না করে তাহলে আর কবে করবে! তবে রাজ্য সরকারের ছুটি থাকছে সেদিন। ওই দিন বেলা ১২টা বেজে ১৫ মিনিটে রাজ্যজুড়ে সাইরেন বাজবে কারন ওই সময়েই নেতাজীর জন্ম হয়েছিল। ওই দিন রাজ্য সরকার এক মিছিলের আয়োজন করবেন। তাতে মুখ্যমন্ত্রী যেমন যোগ দেবেন তেমনি সমাজের সকল স্তরের মানুষদেরও যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বাণ করা হবে। সাড়ে ১১টার মধ্যে সেদিন সবাই চলে আসবেন শ্যামবাজার মোড়ে। ঠিক বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে রাজ্য জুড়ে বাড়ি বাড়ি উলুধ্বনি দেওয়া ছাড়াও বাজানো হবে শঙ্খ। আর ওই সময়েই শ্যামবাজার থেকে শুরু হবে রেড রোডে নেতাজীর মূর্তির উদ্দেশ্যে পদযাত্রা। সেই মিছিলে অংশ নেবে কলকাতা পুলিশের ব্যান্ডও। পাশাপাশি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি রেড রোডের প্যারেডে নেতাজীকে নিয়ে থাকবে ট্যাবলো। তবে সব থেকে বড় আকর্ষণ হবে ১৫ আগস্টে রেড রোডের প্যারেড। এইবছর ওই প্যারেড পুরোপুরি নেতাজীকে উৎসর্গ কতা হবে ও তাঁকে কেন্দ্র করেই করা হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিনের বৈঠকে নানাজনের কাছ থেকে নানা অভিমত উঠে আসে নেতাজীর জন্মজয়ন্তীকে নানা ভাবে উদযাপন করার জন্য সেই সব শুনে সেই সব অভিমতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান তিনি। এরই সঙ্গে রাজ্য সরকারের নিজস্ব পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্য সরকার কারও কাছ থেকে কোনও রকম অর্থসাহায্য না নিয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে অক্সফোর্ড, হাভার্ভ, কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকার রাজারহাটে তৈরি করবে আজাদহিন্দ ফৌজ মনুমেন্ট। রাজ্যের প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠবে এনসিসির ধাঁচে জয়হিন্দ বাহিনী। সেই বাহিনীর সভ্য হতে যে সব পড়ুয়া এগিয়ে আসবে তাঁদের পরবর্তীকালে সরকারি চাকরি, শিক্ষা, গবেষণার ক্ষেত্রে কিছু সুযোগসুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও নেতাজীর লেখা ‘তরুনের স্বপ্ন’ রাজ্যের সব স্কুল কলেজে রাজ্য সরকারের তরফে বিলি করা হবে। সেই সঙ্গে এবার থেকে নেতাজীর জন্মদিনকে রাজ্য সরকার ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে পালন করবে। তবে সব থেকে বড় ঘোষণা জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনের ধাঁচে এবার বাংলায় তৈরি হতে চলেছে বাংলা প্ল্যানিং কমিশন যা নেতাজীর ভাবধারায় গড়ে তোলা হবে।