এই মুহূর্তে জেলা

রাজ্যে প্রথম বাঙালী হিসেবে পেঙ্গবা (মনিপুরী ইলিশের) ডিম ফোটালো অমিত হাজরা।


হুগলি , ২২ সেপ্টেম্বর:- ভোজনপ্রিয় বাঙালীর ভাতে মাছে রান্নার পদের জুড়ি মেলা ভার।আর সেই মাছ যদি মাছের সেরা ইলিশ হয় তাহলে আর ষোলোকলাপূর্ন। এবার অগ্নিমূল্য ইলিশ নয় ইলিশের সম স্বাদের মাছের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী করছেন হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম রাজহাটের হাজরা অ্যাকোয়াটিকার অমিত হাজরা। মাছটির নাম পেঙ্গবা মূলত মনিপুরের একটি হারিয়ে যেতে বসা মাছ যার স্বাদের সাথে ইলিশের স্বাদের মিল থাকায় অনেকে একে মনিপুরী ইলিশও বলছেন। রাজহাটের চৌতাড়ায় প্রায় ৩.৫ বিঘে জমির উপর হ্যাচারিতে এই মাছের চাষ করছেন তিনি। রাজ্যে সরকারি উদ্যোগে মেদিনীপুর থেকে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী শুরু হলেও বেসরকারী উদ্যোগে এই প্রথমবার সারা বাংলার মধ্যে এই মাছের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী করে লালন পালন করছেন তিনি। গুসকরার সুদীপ চেংদার বাবু অমিত বাবুকে এই চাষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সুদীপ বাবু জানান বিশেষ পুঁটি প্রজাতির এই পেঙ্গবা মাছ (বেলনাগিরি বার্ক) যে কোনো সাধারন পুকুরে(জলে) বাড়তে সক্ষম।প্রতি ১ বিঘে জায়গায় ১০০০-১২০০ পিস মাছ চাষ করা যেতে পারে কিংবা অনান্য রুই, কাতলা প্রভৃতি মাছের সাথে মিশ্র চাষও করা যায়।

এই মাছ চাষে খরচ খুব কম এরা পুকুরের নীচে থেকে উপরের বিভিন্ন ঘাস ,পানা ,শ্যাওলা খেতে সক্ষম। এই মাছ কেজি প্রতি এই বছর ৬০০-৮০০টাকায় বিক্রিও হয়েছে বলে জানান তিনি, চাষীবন্ধুদের কাছে মাছটি এখন বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছে। হাজরা একোয়াটিকা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত সহ দেশের বিভিন্ন শহরে মাছের বাচ্চা রপ্তানি করা হচ্ছে। বছরে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই মাছটির প্রজননকাল। এই মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট হল মাছটি পুঁটি প্রজাতির হলেও বড় হবার পর মাছটিও স্বাদে ইলিশের স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও মাছের আঁশগুলিও অনেকটা ইলিশ মাছের ন্যায় ছোটো ছোটো কিন্তু ইলিশের মত কাঁটা নেই। এই বিশেষ প্রজাতির মাছে উচ্চমাত্রায় ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড বর্তমান যা হার্টের রোগীদের জন্য মোক্ষম দাওয়াই।

হাজরা অ্যাকোয়াটিকার কর্নধার অমিত হাজরা জানান যে মাত্র ৫০ দিনে এই মাছ ১৫০ গ্রামের বেশি বাড়তে সক্ষম, রাজ্যে এই মাছ বিভিন্ন জেলাতেও চাষ শুরু হয়েছে। পুকুরে অনান্য মাছের সাথে মিশ্রচাষে এই মাছ ৪০০-৫০০গ্রাম হয় বছরে অন্যদিকে শুধুমাত্র পেঙ্গবা চাষে ৬০০-৮০০ গ্রাম মাছের ওজন হয়। রাজ্যে বর্তমানে যেভাবে এই মাছের চাহিদা তা তিনি রপ্তানি করে উঠতে পারছেন না।অমিতবাবু জানান অনান্য সকল মাছের থেকে এই মাছ চাষ সহজ, কম ব্যায়ে বেশ লাভজনক। তিনি চান বাংলা থেকে আরও চাষ হোক এই মাছের, সকল বাজারে ছেয়ে যাক এই মাছ। এই মাছ রাজ্যের সমস্ত বাজারে সহজলভ্য হলে বর্তমানে আকাশছোঁয়া ও মধ্যবিত্তের হাতের বাইরে যাওয়া ইলিশের সম স্বাদে কম দামে এই মাছ কিনতে পারবে সকলে। অমিত বাবু এর পূর্বে কলা চাষ করে ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জীর কাছে থেকে কৃষকবন্ধু সম্মান পেয়েছেন।এক কথায় বলা যেতে পারেই ইলিশের চাহিদা পূরনে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে এই মনিপুরী ইলিশ রাজ্যেও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।