হাওড়া , ২৭ মে:- গাছ কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দমকলকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হল হাওড়ায়। ঘটনাটি ঘটে বুধবার বেলুড়ের গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। ঘূর্ণিঝড় আমফানে ইলেকট্রিক তারের উপরে পড়ে থাকা গাছের ডাল কাটতে গিয়ে তড়িতাহত হয়ে মৃত্যু হয় ওই দমকলকর্মীর। মৃতের নাম সুকান্ত সিংহ রায় (২৭) বলে দমকল সূত্রে জানা গেছে। তিনি হুগলির তারকেশ্বরের বাসিন্দা। বালি ফায়ার স্টেশনে ( অক্সিলারি ফায়ার অপারেটর হিসাবে ) কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে সিএসসির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, দমকল থেকে ওই তারে ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ করার জন্য জানানো হয়েছিল। সিইএসসি’র তরফে জানানো হয় লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লাইন বন্ধ হয়েছে এ কথা বলার পরেও লাইন চালু ছিল এবং এরপরেই কাজ করতে গিয়েই তড়িতাহত হয়ে মারা যান ওই দমকল কর্মী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বেলুড় থানা এলাকায়। পুলিশ সিএসসির তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও, এই ঘটনায় সিইএসসির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন। তিনি জানান, এই ঘটনা ক্রিমিনাল অফেন্স। এই ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য ও পরিবারের একজনকে চাকরির ঘোষণা করেন তিনি। বালি ফায়ার স্টেশনের ওসি আর.কে.সাহা বলেন, “সিইএসসি এসে আমাদের লাইন কাট আপ হয়েছে একথা জানানোর পরই আমরা গাছ কাটার জন্য ওদের উডেন ল্যাডার চেয়ে নিয়েছিলাম আমাদের সেফটির জন্য। এরপর গাছ কাটার জন্য আমাদের কর্মী সুকান্ত সিংহ রায়কে সমস্ত নিরাপত্তা দিয়েই উপরে তোলা হয়েছিল। উপরে ওঠার পর দেখি সুকান্তর দেহে কোনও সাড় নেই। এরপর ওকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে আমরা ল্যাডারটা নামিয়ে নিই। ওর কোমরে সেফটির জন্য বাঁধা থাকায় এরপর ওকে আমরা নিচে থেকে লুফে ধরে নিই। তারপর প্রথমেই সুকান্তকে জয়সোয়াল হাসপাতালে নিয়ে আসি। তারপর সেখান থেকে ওকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে এলাম। সিইএসসিকে আমরা গাছ কাটার আগে ইলেকট্রিক কাট আপের কথা বলেছিলাম। ওরা এসেছিল। লাইন কাট আপের কথা জানানোর পর আমরা এই কর্মীকে গাছ কাটার জন্য উপরে তুলেছিলাম। কিন্তু সিইএসসি কি কাট আপ করেছে আমরা জানিনা।” এদিকে, দমকলকর্মী সুকান্ত সিংহ রায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন হাওড়া জেলা হাসপাতালে আসেন ডিজি ফায়ার জগমোহন, হাওড়া ডিভিশনাল অফিসার দীপঙ্কর পাঠক সহ দমকলের আধিকারিকরা। সহকর্মীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ডিজি ফায়ার বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তিনি অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। অক্সিলরি ফায়ার অপারেটার পদে নিযুক্ত ছিলেন। ইতিমধ্যেই সিইএসসি’র বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। বেলা সোয়া বারোটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। রাজ্য সরকারের নিয়মমাফিক সমস্ত রকমের সহায়তা মৃতের পরিবার পাবে বলেও জানান তিনি।দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এদিন হাওড়ায় এসে মৃত দমকল কর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই ফায়ার ব্রিগেডের তরফ থেকে সিইএসসির বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি। ৩০৪ ধারায় মামলা হয়েছে। এই ঘটনায় পুরোটাই সিইএসসির গাফিলতি ছিল। তাতেই তরতাজা একটি প্রাণ চলে গেল। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে ঘটনাটি জানিয়েছি। আমরা এই পরিবারের পাশে রয়েছি। এই বিপদের সময় আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাজ করছে। সিইএসসির গাফিলতির জন্য আজকে এতবড় ঘটনা ঘটে গেল।