মালদা,১৮ ফেব্রুয়ারি:- প্রায় দেড় কিলো ওজনের ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা ছিনতাইয়ের অভিযোগে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হলো পুলিশের এক এএসআই। এই ঘটনায় আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। যার মধ্যে একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার রয়েছে। মঙ্গলবার ধৃতদের মালদা আদালতে পেশ করলে ছয় দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বিচারক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত এএসআই-এর নাম রাজীব পাল। তিনি ইংরেজবাজার থানায় কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি ধৃত আরেক সিভিক ভলেন্টিয়ারের নাম ইলিয়াস শেখ। সে ইংরেজবাজারের মিল্কি পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত। এছাড়াও এই ঘটনায় ধৃত আরও দুই জনের নাম স্বাগত মন্ডল এবং সেনাউল হক । স্বাগত মন্ডল কলকাতার বরানগরের বাসিন্দা। তিনি এই সোনা নিয়ে মালদা হয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন। অপরদিকে সেনাউলের বাড়ি ইংরেজবাজার থানার কোঠাবাড়ী এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ৩০ মে । কিন্তু ছয় মাস পর ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর পুরাতন মালদা থানায় সোনা ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ নথিভুক্ত হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। অভিযোগ করেছিলেন বরানগরের বাসিন্দা স্বাগত মন্ডল । ছিনতাইয়ের সময় স্বাগতম মন্ডলের মোবাইলটা কেড়ে নিয়েছিল অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার ইলিয়াস শেখ। এই মোবাইল বিক্রি করে দেয় সেনাউল হক’কে । এরপরই বিভিন্ন সূত্র ধরে ছিনতাই হওয়া ওই মোবাইল উদ্ধার করে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। তারপরই এই ঘটনার পিছনে এএসআই রাজিব পালের নাগাল পেয়ে যায় পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩৯২ এবং ১২০ ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। কারণ , এই সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনার পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা । যে কারণে অভিযোগকারী বরানগরের বাসিন্দা স্বাগত মন্ডলকে কলকাতা থেকে সোমবার গ্রেফতার করে নিয়ে আসে মালদা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছিনতাই হয়ে যাওয়া প্রায় দেড় কিলো ওজনের সোনার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। গত ৩০ মে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে এই সোনা নিয়ে সড়ক পথেই একটি গাড়ি করে কলকাতায় যাচ্ছিলেন স্বাগত মন্ডল । তিনি কলকাতায় সোনার কারবারে যুক্ত। ওইদিন রাতে পুরাতন মালদা থানার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ঝাঝড়া মোড়ে গাড়ি থামিয়ে সোনা ছিনতাই করা হয় । ঘটনার সময় স্বাগত মন্ডলের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। সেই ঘটনার মৌখিকভাবে ওইদিনই পুরাতন মালদা থানায় অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা স্বাগত মন্ডল। কিন্তু লিখিত অভিযোগ করেন ২১ নভেম্বর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ ছয় মাস পর ছিনতাইয়ের অভিযোগ কেন, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। আর পুরো বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। প্রাথমিক তদন্তে ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারের পরই পুরো ঘটনাটি উঠে আসে পুলিশের কাছে। মোবাইল সূত্র ধরেই নানান তথ্য পুলিশ হাতে পেয়ে যায়। এরপরই তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা জানতে পারেন যে, এই ছিনতাইয়ের ঘটনাটি রীতিমতো পরিকল্পনামাফিক ঘটনা হয়েছিল । যার কারণেই কলকাতার ব্যবসায়ীকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে মালদা পুলিশ। পুলিশি জেরায় ধৃত ওই ব্যবসায়ী ভেঙে পড়েন। সে জানায় ওই সোনা অন্য একজনের জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে সংগ্রহ করে কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছিলেন । এরপরই পুলিশি জেরায় আরো সমস্ত ঘটনার কথা স্বীকার করে নেয় ধৃত ব্যবসায়ী স্বাগত মন্ডল।