কলকাতা,১০ ফেব্রুয়ারি:- অর্থমন্ত্রী ড: অমিত মিত্র আজ বিধানসভায় রাজ্যের ২০২০-২১ আর্থিক বছরের জন্য ৮ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন। ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে অর্থমন্ত্রী বহু জনমুখী নতুন প্রকল্প ও পরিকাঠামো নির্মানের কথা ঘোষণা করেন।বাজেটে প্রবীণদের সুরক্ষা, যুবাদের কর্ম সংস্থান, অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে একাধিক কর ও মাশুল ছাড়েরও সংস্থান রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট প্রস্তাবে আগামী অর্থ বছরে রাজস্ব খাতে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষমাত্রা ধার্য করেছেন। যা চলতি অর্থ বছরের আদায় হওয়া রাজস্বের তুলনায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।এছাড়া বাজেটে সরকারি বন্ড বিক্রি করে এবং খোলা বাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ আদায়ের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কর কাঠামো সংস্কার ও বিভিন্ন উত্সাহ প্রকল্পের মাধ্যেমে রাজস্ব সংগ্রহের হার বাড়ানো হবে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট প্রস্তাবে তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণদের জন্য দুটি পৃথক বার্ধক্য ভাতার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন।বন্ধু ও জয় জহার নামের এই দুই প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ যারা অন্য কোন পেনশন পান না, তাঁরা মাসে ১ হাজার টাকা করে বার্ধক্যভাতা পাবেন।এই দুই প্রকল্পের জন্য বাজেটে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।এর ফলে রাজ্যের ২৫ লক্ষ আদিবাসী ও তফশিলি সম্প্রদায়ের প্রবীণ উপকৃত হবেন। আগামী অর্থবর্ষের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসাথী নামের একটি নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন ।এই প্রকল্পে প্রতি বছর এক লক্ষ যুবক-যুবতীর নিয়মিত আয়ের সংস্থানের লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।এই প্রকল্পে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির নতুন প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে।অর্থমন্ত্রী জানান গত আর্থিক বছরে রাজ্যে ৯ লাখ ১১০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য আগামী আর্থিক বছরের বাজেটে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট প্রস্তাবে আগামী দুবছরে রাজ্যে আরও ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও ঘোষণা করেন। ঝাড়গ্রামে বীরসা মুণ্ডা বিশ্ববিদ্যালয়, তফশিলি জাতি অধ্যুষিত এলাকায় আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের জন্য একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা অর্থমন্ত্রী আজ ঘোষণা করেছেন। রাজ্যের গরিব মানুষদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বাজেটে ‘হাসির আলো’ নামে একটি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করাা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় যাঁরা ত্রৈমাসিকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁদের বিনা শুল্কে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হবে। ক্ষুদ্রশিল্পে উৎসাহ দিতে অর্থমন্ত্রী আগামী ৩ বছরে রাজ্যে আরও ১০০টি নতুন এমএসএমই পার্ক তৈরির কথাও ঘোষণা করেন ।
এছাড়াও রাজ্যের বাজেট প্রস্তাবে রাজ্যের বিভিন্ন চা বাগানে স্থায়ীভাবে কর্মরত গৃহহীন চা শ্রমিকদের জন্য অর্থমন্ত্রী একটি আবাসন প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘চা সুন্দরী’ নামে এই প্রকল্পে আগামী তিন বছরে রাজ্য সরকার ওই শ্রমিকদের জন্য আবাসন গড়ে দেবে। শুধু তাই নয়, চা শিল্পের ক্ষেত্রে আগামী ২টি অর্থবর্ষের জন্য কৃষি আয়কর সম্পূর্ণ মকুবের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উত্সাহ দিতে অর্থমন্ত্রী বাজেটে বাংলাশ্রী নামে এক নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন ।এই প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেটের বক্তৃতার শুরুতেই কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় রাজ্য বহু কোটি টাকার পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী অভিয়োগ তোলেন ।তিনি বলেন, চলতি মাস থেকে রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়েছে।বাড়তি বেতন ও ভাতা দিতে রাজ্যের কোষাগার থেকে দশ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।।তা স্বত্তেও রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির হার ১০.৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।