হাওড়া,২০ ডিসেম্বর:- বেজে গেল হাওড়া পুরভোটের দামামা। শুক্রবার হাওড়ার জেলাশাসক সর্বদলীয় বৈঠক করে নতুন বছরে হাওড়া পুরভোটের ইঙ্গিত দিলেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া মহিলা সংরক্ষণের খসড়া নোটিশ দিলেন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। এই খসড়া তালিকা ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা। খসড়া তালিকায় পাশ হওয়া মহিলা সংরক্ষণের পুনর্বিন্যাসে কপালে ভাঁজ ২০১৩ সালে পুরভোটে জয়ী একাধিক কাউন্সিলার ও মেয়র পারিষদদের। খসড়া তালিকা অনুযায়ী প্রায় ১৩ জন কাউন্সিলার এবার বাদ পড়তে চলেছেন। নির্বাচন কমিশনের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী ‘রোস্টার’ ফলো করে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকার উপর কারও কোনও বক্তব্য থাকলে তা আগামী ২ জানুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। জল্পনা ও আশঙ্কার মধ্যেই বহু কাঙ্খিত হাওড়া পুরভোটের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশি সব রাজনৈতিক দলই। নির্বাচন কমিশনের দাবি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ও এদিনের দেওয়া খসড়া তালিকার উপর রাজনৈতিক দলগুলিকে বক্তব্য পেশের জন্য দেওয়া সময় অতিক্রম করলেই আগামী জানুয়ারী মাসের ৮ তারিখ চুড়ান্ত খসড়া তালিকা পেশ করা হবে।
এরপর থেকে দশ সপ্তাহ পর চুড়ান্ত নির্বাচনের দিন ঘোষোণা করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ভোট কিছুটা পিছোলেও সম্ভবত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে সম্পন্ন হবে হাওড়া পুরসভার ভোট প্রক্রিয়া। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর সপ্তম হাওড়া পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারপর এক বছরেরও বেশী সময় ধরে রাজ্য সরকার প্রশাসক বসিয়ে পুর পরিষেবা চালু রাখে। সেক্ষেত্রে সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের তরফে ওঠে পুর পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ। এমনকি পুর পরিষেবার বেহাল অবস্থা নিয়ে সরব হন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। পুরভোটের দাবিতে এক বছরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছিল বিরোধী দলগুলি। অবশেষ রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে কোমর বেধে মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিতে চলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। এদিনের বৈঠকে হাওড়া পুরসভার ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের আবেদন জানানো হয় সব রাজনৈতিক দলগুলির তরফে। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে আগামী পুর নির্বাচন ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। বৈঠকে উপস্থিত বাম নেতা প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ রায় জানান, আমরা ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাব। অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহা বলেন, ২০১৫ সালে বালি পুরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করার সময় রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছিল হাওড়া মিউনিশিপ্যাল কর্পোরেশনকে-“কর্পোরেশনে পরিণত করতে ওয়ার্ডগুলির পুনর্বিন্যাস করা হবে। কিন্তু এখন সেই দাবি থেকে সরে আসছে রাজ্য সরকার। নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনের সাথে সাথে আদালতের দারস্থ হবে বিজেপি”। তবে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেস কিছু জানায়নি। ২০১৩ সালে দীর্ঘ বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে পুরবোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে জয় পায় তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস তিনটি, বাম ও বিজেপি দুটি করে আসন দখলে নেয়। পরবর্তীকালে কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬। ২০১৫ সালে বালি পুরসভাকে হাওড়া পুরসভার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৬টি আসনে নতুন করে ভোট হয়। ১৬টি আসনেই ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। হাওড়া পুরসভায় ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৬টি। তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২তে। এদিনের পেশ হওয়া খসড়া তালিকায় ৬৬টি আসনের এক তৃতীয়াংশ বা ২২টি ওয়ার্ডকে মহিলা সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করা হয়।