এই মুহূর্তে কলকাতা

হাইকোর্টে ওবিসি শংসাপত্র বাতিল নির্দেশের পরেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকবে বলে আশ্বস্ত রাজ্যের।

কলকাতা, ২৩ মে:- কলকাতা হাইকোর্টের ওবিসি সংশাপত্র বাতিল সংক্রান্ত নির্দেশের পরেও লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের প্রাপকদের আপাতত কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। তাঁদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা বহাল থাকবে বলে রাজ্যে সরকার আশ্বস্ত করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে ওই সংশাপত্র প্রাপকদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতদিন ধরে তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যে সব সুযোগ-সুবিধা পেতেন তার সব কিছু আর তাঁরা এখন পাবেন কী পাবেন না, তা নিয়ে। যদিও নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে, তাই যতদিন না চূড়ান্ত কোনও রায় আসে ততদিন লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ ওবিসি সংসাপত্র থাকা মানুষেরা যা সব সুযোগ-সুবিধা পেতেন তার সব কিছুই বহাল থাকবে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যের চাকরি হারানো ২৬ হাজার মানুষের পাশে যেভাবে দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার ঠিক সেভাবেই এই ৫ লক্ষ ওবিসি সংসাপত্র ধারী মানুষের পাশে থাকছে রাজ্য।

এখন লোকসভা নির্বাচনের কারণে আদর্শ আচরণ বিধি লাগু আছে, তাই সরকারী ভাবে এখনই এই মর্মে কিছু ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষের পরে আদর্শ আচরণবিধি প্রত্যাহার হলে রাজ্য সরকার এই মর্মে যা জানাবার তা জানিয়ে দেবে। উল্লেখ্য, গতকাল ৭ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের দরুণ মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এই রায় আমি মানি না। যখন ২৬ হাজার শিক্ষককে বাতিল করেছিল বিজেপি, তখনও বলেছিলাম, ওদের রায় আমি মানি না। আজকের রায়ও আমি মানব না। সংরক্ষণে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কারও নেই। এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাব।’ ২০১০ সালে ওবিসি সংরক্ষণের নতুন বিধি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল সেই বছরেই ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলার ৪২টি সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালে এই সংক্রান্ত একটি আইন, West Bengal Backward Classes (Other Than Scheduled Castes and Scheduled Tribes) Act 2012 প্রণয়ন করে। ওই আইন মারফত মোট ৭৭টি সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসেবে চিহ্নিত করে সংরক্ষণের আওতায় আনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

এই ৭৭টি সম্প্রদায়ের মানুষদের রাজ্য সরকারের তরফে ওবিসি সংসাপত্র-ও দেওয়া হয়। ওই আইনকে কেন্দ্র করেই সেই বছরেই মামলা দায়ের করা হয় ৭ কলকাতা হাইকোর্টে। তারপর প্রায় ১২ বছর বিভিন্ন এজলাসে এই মামলার শুনানি শেষে গতকাল তার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। গতকালের রায়ে ২০১২ সালের আইনের ১৬ নম্বর ধারাটি বাতিল করা হচ্ছে। এই ধারার মাধ্যমেই ওবিসি কমিশনে’র অনুমোদন ছাড়া মোট ৩৭টি সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। আপাতত কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওবিসি সম্প্রদায় চিহ্নিতকরণের কাজ করবে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। তারপর আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা কার্যকর করতে হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওবিসি সংরক্ষণ তাঁর সরকার আইন মেনেই করেছিল। তাঁর কথায়, ‘আমরা সমীক্ষা করেছিলাম। উপেন বিশ্বাস চেয়ারম্যান ছিলেন। কোর্টে তখনও কেস হয়েছিল। বিজেপি হেরে গিয়েছিল। এ বারও তাই হবে। আমাকে ওরা চেনে না। আমি মাথা নত করার লোক নই। মুসলিমেরা কেন তফসিলিদের চাকরিতে ভাগ বসাবে? ওরা এত খারাপ নয়। নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করার জন্য এই রায়। উনি যা বলছেন, কেউ কেউ তা-ই করছেন। কিন্তু গায়ের জোরে কেউ যদি মনে করেন, রাজ্য সরকারের অধিকার কেড়ে নেবেন, তা হবে না। যত দূর যেতে হবে, যাব। এই রায় মানছি না,মানব না। আইনে বিভেদ হয় না।’