কলকাতা ৭ ফেব্রুয়ারি:- মঙ্গলবারের পর বুধবার। রাজ্যে মহিলাদের ওপরে নির্যাতন ইস্যুতে বিজেপির আনা নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে এদিন রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সভার প্রথমার্ধে ওই মুলতুবি প্রস্তাব আনেন বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেন তিনি। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব পাঠ করতে দিলেও আলোচনার অনুমতি দেননি। এরপরই বিধানসভায় কালো কাপড় নেড়ে প্রতিবাদ জানান বিজেপির বিধায়করা। সরকার পক্ষের মহিলা বিধায়করা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিবাদ জানান। দুপক্ষের চাপান উতরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় ১০ মিনিট চিৎকার চেঁচামেচি করার পর অধ্যক্ষ অধিবেশনের বিরতি ঘোষণা করেন। অধ্যক্ষের তরফ থেকে বিরতি ঘোষণা হলে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার সাউথ গেটের বাইরে এসে এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন এদিন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল অভিযোগ করেছেন, মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে সুরক্ষিত নয় মেয়েদের সম্মান।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি এবং মহিলা ও শিশুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে যে এদিন মুলতুবি প্রস্তাব জমা করা হবে আগেই জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মতো এদিন প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে ওই প্রস্তাব উত্থাপন করেন মালতী রাভা রায়, সুমিতা সিনহা, চন্দনা বাউরি, শিখা চট্টোপাধ্যায়, তাপস মণ্ডল, অগ্নিমিত্র পাল। এই ঘটনায় তাঁরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ান দাবি করেন। যদিও এদিন বিধানসভায় ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের এই প্রস্তাব পাঠ ছাড়া আর কোনও কিছুর অনুমতি না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ‘পুলিশ মন্ত্রী ধিক্কার’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হইচই করতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। নিজের আসনে দাঁড়িয়েই সরব হন তাঁরা। কালো কাপড় ছিল তাঁদের হাতে৷ সেটা নিয়েও তাঁরা চিৎকার করতে থাকেন৷ দশ মিনিটেরও বেশি এই পরিস্থিতিতে চলতে থাকে সভার কাজকর্ম।
এরপর বিরতি ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার দক্ষিণ দিকের গেটে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এরপর আলোচনার সুযোগ না দেওয়ার জন্য কড়া সমালোচনা করেন অগ্নিমিত্র পাল। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নারী নির্যাতন হচ্ছে শিশুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে বিধানসভাতেও আপনারা বলতে দেবেন না। তাহলে কিসের জন্য বিধানসভা রেখেছেন ? সব বন্ধ করে দিন ।’’ শাসকের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধেরও অভিযোগ করেছেন তিনি। এদিকে বিরোধীদের আচরণ নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছে শাসক দল। যেভাবে দিনের পর দিন বিধানসভার অধিবেশন বাঞ্চল করার জন্য বিরোধী দল উঠে পড়ে লেগেছে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মানুষের সমস্যার কথা বলার জন্য, সরকারকে বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে আক্রমণ করার জন্য বিধানসভার কক্ষকে ব্যবহার না করে বিজেপি, টিভির পর্দায় টিঁকে থাকার জন্য বিধানসভার বাইরেটাকে বেশি ব্যবহার করছে। ৩৩ বছরের পরিষদীয় জীবনে এত দায়িত্বজ্ঞানহীন বিরোধী দল কখনো দেখিনি।