মহেশ্বর চক্রবর্তী, ১৭ জানুয়ারি:- খোকার হাতে ঘুরি আর লাটাই আর সেই ভাবে দেখা যাচ্ছে না।হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের খেলাধুলা। ঘুরি এখন ক্রমশ অতীত ইতিহাসে পরিনত হচ্ছে। পৌষসংক্রান্তির দিন থেকেই বিকাল হলেই মাঠে দেখা যেত ঘুড়ি হাতে কিশোর থেকে যুবকদের।কিন্তু সেই ঐতিহ্য এখন আর সেই ভাবে দেখা যাচ্ছে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সমাজ এখন অন্য ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামের ছেলে মেয়েও ক্রমশ উগ্র আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামের কৃষ্টি – সংস্কৃতি, খেলাধুলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেবল মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারে চোখ রাখছে।ঘুরি হাতে আর নদীর পাড় থেকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় শহরে আগে বাড়ির ছাদে ঘুরি ওড়াতে দেখা যেত আর গ্রাম বাংলায় পৌষসংক্রান্তি থেকে মাঘ মাসজুড়ে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যেত কিশোর ও যুবকদের।আর তাদের উৎসাহ দিতে দেখা যেত পাড়ার যুবতীদের।পাড়ার যুবতীরা দল বেঁধে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখতেন।এখন এই সব কেবল স্মৃতিতে পরিনত হয়েছে। তবে হুগলি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এখনও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ঘুড়ি ওড়াতে দেখা গেলেও সেই রখম রমরমা চোখে পড়ে না।বর্তমানে মাঘ মাসের বিকেলের আকাশে ক’টা ঘুড়ি উড়ছে তা আঙুল গুনে বলে দেওয়া যায়।
আগে মাঘ মাস মানেই আকাশে ঘুড়ির বিপুল আনাগোনা দেখা যেত। কোথায় গেলো সেই সব দিন। কোথায় সেই মাঞ্জা দেওয়ার ব্যস্ততা। কাচ গুঁড়িয়ে, গদের আঠা বা ভাতের ফ্যান দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যে একটা নির্মল আনন্দ পেত বাচ্চারা। এখন আর এ সব কিছুই দেখা যায় না। ছোটদের সঙ্গে বড়রাও সামিল হতেন ঘুড়ি ওড়ানোয়। ‘ভো কাট্টা’ চিৎকারে মুখর থাকত পাড়া। বাড়ির ছাদ, মাঠ, রাস্তার ধারের উঁচু ঢিপি থেকে হইহই করে ঘুড়ি ওড়াত ছেলে-বুড়ো। রীতিমতো চলতো ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। এই বিষয়ে হুগলির গোঘাটের একজন প্রবীন মানুষ আক্ষেপের সুরে জানান, আগে মাঘ মাস জুড়ে ঘুড়ি ওড়ানো একটা উৎসবে পরিণত হত। ছোট-বড় সকলে আনন্দে মেতে থাকতাম। এখন আর আকাশে ঘুড়ি দেখা যায় না।মনটা বিষাদে ভরে যায়। এখন পাড়ায়-পাড়ায় রাস্তার পাশে লাটাই, সুতো, ঘুড়ির দোকানও বড় একটা দেখা যায় না। আর ময়ূরপঙ্খী, পেটকাটি, মোমবাতি, চাঁদিয়াল নামে ঘুরি পাওয়া যায় না।এর বদলে প্লাস্টিকের ঘুড়ি দেখা যায়।তাও হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে।সবমিলিয়ে বর্তমানে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই আনন্দটাই এখন ফিকে হয়ে গেছে।