কলকাতা , ২৭ মে:- গত বছরের আমফান পর্ব থেকে শিক্ষা নিয়ে ইয়াসের ত্রাণ বণ্টনে বাড়তি সতর্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। আমফানের ত্রাণের ত্রিপল-চাল চুরির অভিযোগে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে ঘূর্ণিঝড় যশ এর ক্ষতিপূরণ বিলির সময় তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এবার প্রথম থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রাণ ও ক্ষতি পূরণ বণ্টনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি অপচয় এড়াতে দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে বাড়িতে ত্রিপল, চাল-ডাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। ত্রাণ নিয়ে যাতে আর বিক্ষোভ বা চুরির ঘটনা না সৃষ্টি হয় তাই এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এরাজ্যকে তেমন ভাবে স্পর্শ করেনি। কিন্তু তার ল্যাজের ঝাপটায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পূর্বমেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকার সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।ভেসে গিয়েছে একের পর এক গ্রাম। সমুদ্রের নোনা জল চাষের জমিতে ঢুেক বিঘের পর বিঘে জমির ফসল নষ্ট করে গিয়েছে। লন্ডফন্ড দিঘায় গার্ড ওয়ালের পাথর ঢেউেয়ের তোড়ে উঠে এসেছে রাস্তায়।
একাধিক হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজ্যে। এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিপর্যয় কাটলেই সবার আগে দ্রুত উদ্ধারকাজ, ক্ষতিপূরণের কাজ শুরু করা হবে। এদিনই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরের সচিবদের থেকে ক্ষতির খতিয়ান নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১.১৬ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০০ কোটি টাকা। এছাড়া স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন জায়গায় টর্নেডোর কারণেও প্রচুর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, ভেঙে গিয়েছে অজস্র কাঁচাবাড়ি। তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ মিলবে বলে এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটা আগামী কয়েক দিনে স্পষ্ট হবে। এদিকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলেই ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্গঠন এর কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।আগামী ৩ জুন থেকে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্প শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। তাইলেচলবে ১৮ জুন পর্যন্ত।তিনি বলেন,বলেন, প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করবে সরকার। সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারেন।
এই আবেদন খতিয়ে দেখা হবে ১৯ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। তার পরে ১ জুলাই থেকে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছে যাবে। ২০২০ সালে আমফান সুপার সাইক্লোনের প্রভাবে রাজ্য লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। আর সেই পরিস্থিতি সামলাতে ও মানুষকে সাহায্যে করতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপল ও চাল-ডাল সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত-এর মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া করেন মমতা। কিন্তু বিভিন্ন জেলা থেকে ত্রিপল চুরি, ত্রাণের চাল চুরি ও ক্ষতিপূরণের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের ছোট বড় নেতাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টিকে হাতিয়ার করে রাস্তায় নামে বিজেপি। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে ও বিরোধীদের প্রচারে অন্যতম বড় ইস্যু ছিল আমফানের ক্ষতিপূরণ দুর্নীতি। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে বাড়িতে পরিষেবা দেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।