কলকাতা, ৯ মে:- মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানি ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজভবন। উত্তাল রাজ্যরাজনীতি। এমত অবস্থায় নিজের গায়ে লাগা দাগ মুছে ফেলতে বহস্পতিবার দু’দফা পদক্ষেপ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। প্রথমত সেদিনের ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হল রাজভবনের তরফে। দ্বিতীয়ত,তাঁর বিরুদ্ধে যে অনুসন্ধান করা হচ্ছে তা বেআইনি বলে দাবি করে তদন্ত দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকাকে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল। তবে এই ঘটনা পরম্পরা বিতর্কের আগুন নেভানোর পরিবর্তে আরও উস্কে দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পূর্ব ঘোষণা মতোইএদিন রাজভবনের তরফে কয়েকটি সিসিসটিভি ফুটেজ সামনে আনা হয়। সাংবাদিকরা ছাড়াও কয়েকজন আমন্ত্রিতকে ওই ফুটেজ দেখাতে কলকাতা রাজভবনে আনা হয়েছিল। কিন্তু ঘণ্টা দেড়েকের ওই ভিডিও ফুটেজে মূলত রাজভবনের বাইরের অংশে অভিযোগকারিনীর গতিবিধিই সামনে আনা হয়েছে। অভিযোগকারিনী মহিলাকে মোট দু’বার দেখা গিয়েছে। তাঁকে সেখানে হন্তদন্ত হয়ে একবার পুলিশ আউটপোস্ট একবার ওসি-রাজভবনের ঘরে ছুটোছুটি করতে দেখা গিয়েছে।
তবে এই সিসিটিভি ফুটেজে রাজভবনে ভিতরের অংশ বা রাজ্যপালকে দেখা যায়নি। ফলে এই ফুটেজ প্রকাশ্যে আনার যৌক্তিকতা নিয়ে স্বাভাবিক বাবেই প্রশ্ন উঠেছে। সঙ্গত কারণেই তৃণমূল কংগ্রেস এই ফুটেজ প্রকাশ করা নিয়ে রাজ্যপালকে তীব্র কটাক্ষ করেছে। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, দেখা গেল রাজ ভবনের বাইরে কিছু পুলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। একজন মহিলা যাচ্ছেন। যদি ওই মহিলাই হয়ে থাকেন তবে তার মুখটা ব্লার করে দেওয়া উচিত ছিল। দ্বিতীয়ত রাজ্যপাল বলেছিলেন সত্য সামনে আসবে। তাহলে সেই সময়ের ঘটনা দেখাতে পারতেন। আর ওই মহিলা তো পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। যে ১০০জন ফুটেজ দেখলেন তাঁরা কারা? প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় , চতুর্থ করে সবাই তো ওঁর বশংবদ। এমন ফুটেজে কি প্রমান হবে? প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিকে এই বিতর্কের মধ্যেই সংবিধানের ৩৬১ ধারা অনুযায়ী রাজ্যপালের রক্ষাকবচের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্য সচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাকে এদিন চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস।
চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ যে অনুসন্ধান করছে তা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল এর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি বিশেষ অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।তদন্তের স্বার্থে কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই রাজভবনে চিঠি পাঠিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছে।।শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপাল বোস রাজভবনের স্থায়ী, অস্থায়ী কর্মীদের জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে পুলিশ কোনও রকম তথ্য চাইলে তা না দিতে। তাঁর যুক্তি, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না। কিন্তু ইতিমধ্যেই লালবাজারের তরফে এই ইস্যুতে তদন্ত করা হচ্ছে। যা নিয়ে অখুশি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই প্রেক্ষিতে এবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে নতুন করে। কেন, কাকে আড়াল করতে রাজ্যপাল এই অনুসন্ধান বন্ধ করতে এত উদগ্রীব তা নিয়েই জনমানসে প্রশ্ন দানা বাঁধছে।