এই মুহূর্তে জেলা

নবগ্রাম থেকে নাসা, দেশবাসীর মুখ উজ্জ্বল করলো হুগলির গৌতম।

হুগলি, ১৬ অক্টোবর:- কোন্নগরের নবগ্রাম থেকে নাসা, পথ মসৃণ না হলেও সব বাধা উপেক্ষা করে দেশবাসীর মুখ উজ্জ্বল করলো এক বঙ্গ সন্তান।কোন্নগর এর নবগ্রাম এর বাসিন্দা বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায়। হুগলির ছেলে বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে এ বছর নাসা জেপিএল প্রপাসনাল ল্যাবরেটরি পিপল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এর জন্য মনোনীত করেছে নাসা কতৃপক্ষ। হুগলি জেলার নবগ্রামে এসবেস্টারের চাল ছাড়া ঘর। সব সময় জুতো না পেট ভরা খাবারও।ছয় ভাই বোনের সংসার আর উপার্জন একমাত্র বাবার। পেটে খিদে রেখেও এক চিলতে ঘরে শুয়েই স্বপ্ন দেখতেন আকাশে ওড়ার। তারপর থেকে তার উড়ানো স্বপ্নেরই মতো। শেষে এসে পৌঁছেছেন নাসাতে। শুরু করেছেন ভিন গ্রহে প্রাণ আছে কিনা তাই নিয়ে গবেষণা।

গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের দাদু ঠাকুমা বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে এসেছিলেন। আর এখন মার্কিন মলুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে গৌতম চট্টোপাধ্যায় আমাদের জানালেন, কোন্নগর স্টেশন এর কাছে নবগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মাটির মেঝে, এস মিস্টারের চালের ছোট একটি ঘরে বাবা মা ও ছয় ভাই-বোনের সংসার ছিল তাদের।বাবা সুনিলরঞ্জন সরকারি চাকরি করতেন। ছোট বেলায় প্রথমে শিশু ভারতী স্কুল এরপর বিদ্যাপীঠ স্কুল থেকে পড়াশোনা।হারিকেনের আলোতে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তবে কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারেনি মেধাবী গৌতমকে।শিবপুর বিউ কলেজে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা সেরে, টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে যোগ জায়ান্ট মেট্রোওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপ তৈরিতে।শেষে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা ক্যালটেক।তারপরেই আসে নাসা থেকে ডাক।১৯৯৯ সালে গৌতম বাবু যোগ দেন নাসায়।আমেরিকায় স্ত্রী কন্যা নিয়ে থাকেন গৌতম।

বাবা মারা গিয়েছেন।মা সাধনা চট্টোপাধ্যায় কোন্নগর ক্রাইপার রোডের এক আবাসনের বাসিন্দা।শত ব্যস্ততা থাকলেও প্রায় সময় পেলেই কোন্নগর নিজের পরিবারের কাছে সময় কাটাতে চলে আসেন গৌতম বাবু। গৌতম বাবুর নাসায় এই সাফল্যের খবরে খুশির হওয়া গৌতমবাবুর দিদি,মা ও ভাইদের মধ্যে।সকলেই এখন তাকিয়ে তাদের ছেলে গৌতম এবার কবে নোবেল পায়।পরিবারের প্রত্যেকেই এখন বলছেন এই গর্ব শুধু তাদের কোন্নগর নবগ্রাম বা হুগলি জেলার নয় এই গর্ব দেশের। ভাই গৌতমের এই সাফল্যের পর দিদি রূপালী ভট্টাচার্য বলেন,তাদের খুব কষ্ট করে বড় হতে হয়েছে।গৌতম ছোট থেকেই পড়াশোনার সাথে খেলাধুলায় খুব ভালো।গৌতম যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো তখন থেকেই ওর বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক।ওর ইচ্ছা ছিল নাসা যাওয়ার আর আজ সেই সপ্ন শুধু সফলই হয়নি সেখান থেকে বিশেষ পুরস্কার জিতেছে এটা খুবই গর্বের।

গৌতম বাবুর মা সাধনা চট্টোপাধ্যায় বলেন,ছেলেকে ছোট থেকেই দেখছি এখন ও অনেক বড় মানুষ।কিন্তু মাটির মানুষ।সময় পেলেই সকলের সাথে সময় কাটাতে বাড়ি চলে আসে।ছেলের সাফল্যে কোন মা না খুশি হবে,তাই তিনিও খুব খুশি। গৌতম বাবুর পিসতুতো ভাই কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন,ছোট থেকেই মামীকে দেখেছি খুব কষ্ট করে দাদা দিদিদের বড় করেছে।আর দাদা একদম মাটির মানুষ। দাদা যে এত বড় সাফল্য পেয়েছে সেটা তার কথায় বোঝাই যাবেনা।আর মা অন্ত প্রাণ।সকল পরিবারের সদস্য থেকে এলাকার মানুষের সকলের কাছেই দাদা পাড়ার ছেলে গৌতম কোনো ভেদাভেদ নেই।প্রত্যেকদিন পরিবারের সকলকে ফোন করে খবরাখবর নেন।এখানে এলেই পারায় সকলের সাথেই আড্ডা মারেন সাধারণ মানুষের মতোই।দাদার এই সাফল্য সারা বিশ্বের সাফল্য খুবই গর্বের বিষয় এটা।

গৌতম বাবুর বাল্য বন্ধু কৃতি মাধব ভট্টাচার্য বলেন,গৌতম ছোট থেকেই পড়াশোনা ছাড়াও খেলাধুলায় খুব ভালো ছিল।গুলি খেলায় খুব ঝোঁক ছিল।এছাড়াও ক্রিকেট ফুটবল সব কিছুতেই পারদর্শী।আজ বন্ধু এতো বড় একটা জায়গা নাসা থেকে পুরস্কার পেয়েছে এটা গর্বের।গৌতম যুব সমাজের আইকন।আর গৌতম নবগ্রাম এলে একসাথে তাদের আড্ডাও জমে বেশ। হুগলি জেলার কোন্নগর এর নবগ্রাম এর এক চিলতে ঘর থেকে গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর নাসায় বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ায় ইতিমধ্যে খুশির হওয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।এখন সকলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে কবে এবার তাদের ঘরের ছেলের হাত ধরে নোবেল আসবে।সেই অপেক্ষায় এখন সকলে।