এই মুহূর্তে জেলা

জলঘড়ির সময় দেখেই পুজোর নিয়মবিধি, ৫০০ বছর ধরে একই রীতি চলে আসছে খানাকুলের মিত্র বাড়িতে।


হুগলি, ২৮ সেপ্টেম্বর:- বহুদিন পূর্বে দেশ থেকে জমিদারি প্রথা বিলীন হলেও বাংলার প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার জমিদার বাড়ির কৌলিন্য আজও বজায় আছে, এবং সেই কৌলিন্যর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো গুলি। তাদেরই মধ্য অন্যতম হুগলির খানাকুলের সেন হাটির পাঁচশো বছরের পুরানো মিত্র বাড়ির পুজো। এই বাড়ির পুজো সম্পর্কে বলতে গিয়ে পরিবারের অন্য তম সদস্য কুমার কৃষ্ণ মিত্র জানালেন আমাদের জমিদারি বর্ধমান মহারাজার অধীনে ছিল, আমাদের বাড়ির পুজোর দশমীর দিন এখানে অকাল রথের প্রচলন আছে। দুর্গা পূজার ষষ্ঠীর দিন এই বাড়ির কুল দেবতা রঘুনাথ জিউ কে তার গৃহ থেকে নিয়ে আসা হয় আমাদের দুর্গা দালানে পুজোর চারটে দিন এইখানেই তিনি অধিষ্ঠান করেন এবং দশমীর সকালে তাকে রথে চড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তার গৃহে এই সময়ে পরিবারের সকলে রঘুনাথ জিউর রথের রশিতে টান দেন।

এছাড়াও এই বাড়ির পুজোর যে সময় তা বর্ধমানের মহারাজার উপহার দেওয়া জলঘড়ির সময় মেপে সব কিছু করা হয়। তখন তো সময় দেখার আধুনিক ঘড়ির ব্যবস্থা ছিল না। এই জল ঘড়ি ছিল ভরসা। পুজোর অষ্টমীর দিন সন্ধি পূজার সময় দেখা হয় জলঘড়ির সাহায্যে। আরেকটা অলৌকিক ঘটনা সাক্ষী এই মিত্র বাড়ির পূজো সন্ধি পূজার সময় প্রতিবার দেখা যায় আকাশের বুক চিরে দুটি শঙ্খচিল উড়ে বেড়াচ্ছে। সন্ধি পুজোর দিন পরিবারের বিবাহিত মহিলা সদস্য সদস্যরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। সেই সিঁদুর রেখে দেওয়া হয় সারা বছর, মিত্র বাড়ির বিবাহিত মহিলারা সেই সিঁদুর ব্যবহার করেন। এই বাড়ির পুজোয় অষ্টমী এবং নবমীতে ছাগ বলি দেয়া হয়। আগে পুজোর দিন গুলিতে মিত্র বাড়িতে কামানের তোপ দাগার একটা রেওয়াজ ছিল। বর্তমানে অবশ্য তা বন্ধ হয়ে গেছে। সেই ৫০০ বছর আগে এ বাড়ির পুজোর দিনগুলিতে দুর্গা দালান হ্যাচাক ডেলাইটের আলোয় চারিদিক ঝলমল করতো।

আশপাশের গায়ের মানুষরা মিত্র বাড়িতে আসতেন পুজোর চার দিন পাত পেড়ে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করতেন। তবে দিনকাল পাল্টেছে হাছাক ডে লাইটের বদলে পুজোর দিন গুলি বৈদ্যুতিক আলোয় ঝলমল করে সারা মিত্র বাড়ি আগে যেখানে সানাইয়ের সুরের মূর্ছনায় পুজোর চার দিন গমগম করত মিত্র বাড়ির আশপাশ তা এখন অবশ্য নহবধ বসে না এখন ঢাক এবং কুরকুরির আওয়াজে জানান দেয় ৫০০ বছরের মিত্র বাড়ির পূজোর ঐতিহ্যের কথা। দশমীর দিন এ বাড়ির মাকে রাজহাটি বাজারে মা বিশালক্ষী মন্দির নিয়ে যাওয়া হয় এখানেই মিলন হয় দুই দেবতার তারপর অনুষ্ঠিত হয় বিসর্জন পর্ব তার আগে তালপাতার পুঁথিতে দুর্গা নাম লেখা হতো। এখন অবশ্য তা হয় না লেখা হয় কাগজে। সব মিলিয়ে সেন রাজাদের আমলের সমসাময়িক এই মিত্রবাড়ির পুজোকে ঘিরে আজও উৎসাহের কোন খামতি নেই ।আশপাশের বারোয়ারি পূজোর মাঝেও এই পুজোর একটা আলাদা কৌলিন্য আজও বহন করে চলেছে।