এই মুহূর্তে কলকাতা

তৃণমূল বিজেপি খন্ডযুদ্ধ, কলকাতা পুরনিগমে মাসিক অধিবেশনে ধুন্ধুমার।

কলকাতা, ১৬ সেপ্টেম্বর:- কলকাতা পুরনগমের মাসিক অধিবেশেনে ধুন্ধুমার। দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ বাঁধল তৃণমূল এবং বিজেপি কাউন্সিলারদের মধ্যে। বাদানুবাদ গড়াল হাতাহাতিতে। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খেতে হল মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। পুরনিগমের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এধরণের ঘটনা বেনজির বলে পুর রাজনীতিকদের বড় অংশের অভিমত। ধুন্ধুমারকাণ্ড সামাল দিতে না পেরে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন চেয়ারপার্সন মালা রায়। পরে যদিও পুরসদস্যদের অনুরোধে ফিরে আসেন তিনি। শনিবার পুরনিগমের সাপ্তাহিক অধিবেশন চলছিল। সেই সময় বিরোধীদের কোনও প্রশ্ন ছিল না। অভিযোগ, সেই তৃণমূলের মালা রায় সজল ঘোষকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে আপনাদের বিরোধীদের কেন কোনও প্রশ্ন থাকে না? তার উত্তরে বিজেপি নেতা বলেন, “বলেও কোনও লাভ হয় না। মেয়র-ডেপুটি মেয়র কোনও উত্তর দেন না।” সেই সময় সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝার দিকে তৃণমূল কাউন্সিল অসীম বসু তেড়ে যান বলে অভিযোগ।

তাঁর দাবি মেয়রকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করা যায় না। এরপরই শুরু হয় বাকযুদ্ধ। তারপর তা গড়ায় হাতাহাতিতে। অভিযোগ, তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ পোল্লে, মহেশ শর্মা সহ একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপি কাউন্সিলরদের উপর চড়াও হন। মারধরের অভিযোগ ওঠে। এরপর মালা রায় উঠে বেরিয়ে যান। মেয়র-ডেপুটি মেয়র থামাতে গেলে তাদেরও ধাক্কা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বেশ কিছুক্ষণ গণ্ডগোল চলার পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়। বিরোধীদের দাবি এধরণের ঘটনা কলকাতা পুরনিগমের ইতিহাসে এর আগে কখনও দেখা যায়নি।বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, “ওরা এত গালাগালি করেছে কান থেকে রক্ত বেরবে। ওরা মেরেছে। মালা রায় হাউসের মায়ের সমান। হাউসের অভিভাবিকা। তিনি একচোখে দেখছে।

আমরা একটা বিতর্কে অংশ নিয়েছিলাম। তার জেরে সরাসরি গায়ে হাত দিয়ে দিল। প্রমাণ করে দেব ওরা কতটাকা চুরি করেছে।” তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু বলেন, “কাউকে মারা হয়নি। সজল ছোট ভাইয়ের মতো। ওকে মারব কেন? ওকে ভালবাসি। কিন্তু মাঝেমধ্যে ওর মাথা বিগড়ে যায়। কারোর দিকে আঙুল তুললে দেখবেন বাকি চারটে আঙুল আপনার দিকে রয়েছে। আর সবাই মিলে কি মেরেছে ওকে? আর ও সুস্থ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? সবার দরকার নেই। আমি একাই একশো।” এদিকে এদিনের ঘটনা নিয়ে দুরকম সুর শোনা গিয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের গলায়। এধরণের ঘটনা অনভিপ্রেত বলে দাবি করলেও মেয়র ফিরহাদ বিরোধীদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, বিগত দিনে বর্তমান শাসক দল এর কাউন্সিলররা যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন কেউ তৎকালীন শাসকদলের কোন মেয়রের উদ্দেশ্যেই এ ধরনের চোর বা কটু বদনাম করতেন না।

বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিজেপির পক্ষ থেকে যে ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে তা শাসকদলের সম্মানহানি করছে, সামাজিক ভাবে অপমানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদিও এই মন্তব্যকে কার্যত মান্যতা দেননি ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, তিনি বলেন বিগত দিনে যখন বিরোধী দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতাম তখন বামফ্রন্টের মেয়র ও মেয়র পারিষদ দের ও নানান ধরনের আক্রমন করা হতো। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে কটু কথা বলা হয়েছে এটা ঠিক। তবে রে রে করে তেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি। অসীম বাবুর উচিত ছিল চেয়ার পারসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তাঁর কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানানো। পুরসভার একজন সিনিয়ারসদস্য হিসাবে আমি ব্যথিত।এদিকে ঘটনার পিছনে অন্য কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়েও ইঙ্গিত দিলেন অতীন ঘোষ। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসীমের আচরণ নিয়ে আগামী দিনে দলে মধ্যেও আলোচনা করা হবে বলেও এদিন জানান তিনি।