হাওড়া, ৩ মে:- শুক্রবার বাড়ি ফেরার ট্রেনে উঠে ফোন করে বলেছিলো শনিবার বাড়ি পৌঁছবে। যদিও বাড়ির কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি বাড়ি ফিরবে তার নিথর দেহ। হাওড়ার নলপুর মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা শেখ মুন্না। সাত ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছেলে পরিবারের। বছর সাতেক আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর কোনও সন্তান হয়নি। কোভিড মহামারীর পর থেকে এলাকাতে তেমন রোজগারের পথ না পেয়ে ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন। মাস পাঁচেক আগে বাড়ি থেকে গিয়েছিলেন সুদূর তামিনাড়ুতে জরির কাজ করতে। শনিবার তাঁর বাড়ি ফেরার কথাও জানিয়েছিলেন ট্রেনে উঠে। শেষ কথা হয় বাড়ির লোকের সাথে।এরপর বালেশ্বরের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটছিলো পরিবারের। সব জল্পনার অবসান হল পরিবারের সদস্যর মৃত্যুর খবর পেয়ে। নেমে এল শোকের ছায়া। শুক্রবার বিকেল ৫ টা নাগাদ শেষ কথা হয় তাঁর সঙ্গে। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই মুন্নার ফোনে ফোন করলেও ক্রমাগত বেজে যাচ্ছিলো। রাত ১১টার সময় ফোনের অপর প্রান্তে এক অচেনা ব্যক্তি ফোন তুলে জানাল তাঁদের পরিবারের সদস্যর দুর্ঘটনাতে মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে বাবা ও স্ত্রী রয়েছে তার।
প্রতিবেশী শেখ নাসিম জানান মুন্না খেটে খাওয়া ছেলে ছিল। এলাকাতে ভালো ছেলে বলেই সুনাম ছিল। সাত বছর আগে বিয়ে হলেও নিঃসন্তান ছিল সে। পরিবারে বাবা ও স্ত্রী রয়েছে। এই ধরনের ঘটনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেন তিনি। তিনি জানান তাঁদের পরিবারের এই অসময়ে তারা মুন্নার পরিবারের পাশে রয়েছেন। উল্লেখ্য, শুক্রবার বালেশ্বর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাহানগা বাজার স্টেশনে সন্ধে পৌনে ৭টা নাগাদ ওই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। ভদ্রকের দিকে যাচ্ছিল চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়াগামী যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেসের অভিমুখ ছিল বালেশ্বরের দিকে।করমণ্ডলের বাঁ দিকের লাইনে ছিল একটি মালগাড়ি।
সংঘর্ষে তালগোল পাকিয়ে যায় ৩টি ট্রেন। দুর্ঘটনাতে উল্টে যায় ট্রেনের একের পর এক কামরা। রেল সূত্রে জানা গেছে, বাহানাগা বাজারের কাছে ৫টি ট্র্যাকে ছিল ৪টি ট্রেন। প্রথম লাইনটি খালি ছিল। দ্বিতীয় লাইনে ছিল একটি মালগাড়ি। তৃতীয় লাইনে চলছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। চতুর্থ লাইনে ছুটছিল হাওড়া-যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস ও ৫ নম্বর ট্র্যাকে ছিল দ্বিতীয় মালগাড়িটি। রেল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রথমে দ্বিতীয় লাইনে থাকা মালগাড়ির সঙ্গে তৃতীয় লাইনে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির ওপর। ট্রেনের পিছনের কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে চতুর্থ লাইনে আসা হামসফর এক্সপ্রেসে ধাক্কা মারে। তার ফলে হাওড়াগামী ওই ট্রেনের কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডলের বাকি কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়ে পড়ে পঞ্চম ট্র্যাকে। তার জেরে লাইনচ্যুত হয় ওই ট্র্যাকে থাকা মালগাড়ির ২টি কামরা।