কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারি:- আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় গলব্যথা সর্দি কাশি সাধারণ জ্বরের পাশাপাশি ভাইরাল ফিভার ও জীবাণুঘটিত নানা রোগের প্রকোপ রাজ্য জুড়ে। স্বাস্থ্য দফতরের বাড়তি মাথা ব্যথার কারণ সাধারণ হাম এবং জল বসন্তের প্রাণঘাতী হয়ে ওঠা। গত দেড় মাসে বেলেঘাটা আইডি- হাসপতালে ১১ জন চিকেন পক্স আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। নভেম্বর মাস থেকে ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জন চিকেন পক্স আক্রান্তের। এছাড়া গত রবিবার, ফুলবাগানের বিসি রায় শিশু হাসপাতালে হামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ মাসের এক শিশুর। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলেই পক্সের জীবাণুর চরিত্র পরিবর্তন হচ্ছে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে। স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত মহা নির্দেশক পার্থ দে জানিয়েছেন পক্স আক্রান্ত হয়ে এখনো যাদের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা সকলেই বয়স্ক বা অন্য কোনো জটিল সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। তবে সাধারণ মানুষকে জীবাণুঘটিত অসুখ থেকে বাঁচতে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে যাদের পক্ষে সম্ভব তাদের জল বসন্তের প্রতিষেধক টিকা নেয়ার ও পরামর্শ দিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জল বসন্ত বা চিকেন পক্স হলে বহু ক্ষেত্রে এখনও মানুষ ঘরোয়া টোটকায় ভরসা রেখে চলে, যেটা অত্যন্ত ঝুঁকির।
জ্বরের পাশাপাশি চামড়ায় জল ফোস্কার মতো গুটি বেরোলে মানুষ বুঝে যান তা জল বসন্তের উপসর্গ৷ অনেকেই বাড়িতে রোগীকে মেথি ভেজানো জল খাওয়ানোর মতো টোটকায় ভরসা রাখেন৷ চিকিৎসকরা বলছেন, এই টোটকা প্রয়োগ না করে দ্রুত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। চিকিৎসকের কাছে গেলে দু’ তিন দিনের মধ্যেই রোগীর শরীরে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ পড়ে যায়, যাতে চিকেন পক্স অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এখনও যাঁদের পক্স হয়নি, তাঁদের জল বসন্তের টিকা ভ্যারিসেলা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে ছোটদের চেয়ে বড়দেরই জটিলতা এবং ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। ভ্যারিসেলা ভ্যাক্সিন নিয়ে নিলে অনেকটাই সুরক্ষা মেলে বলে দাবি চিকিৎসকদের৷ টিকা নেওয়ার পরেও কারও পক্স হলে তার তীব্রতা অনেকটাই কম হয়। তবে একবার চিকেন পক্স হয়ে গেলে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার আর দরকার নেই৷ বাড়িতে কারও চিকেন পক্স হলে সেই বছর আর ভ্যাকসিন নিয়ে লাভ হয় না। পিয়ারলেস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা দত্ত জানাচ্ছেন, চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন ১৫ মাস বয়সের পর যে কোনও সময় নেওয়া যায়৷ একদম ছোটদের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৮ মাস বয়সে প্রথম ডোজ এবং ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। সাত বছরের বেশি বয়স হলে প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়।