এই মুহূর্তে কলকাতা

ঢাকের বোল, শঙ্খধ্বনিতে ত্রেয়োদশী সন্ধ্যায় সপ্তমীর আমেজ।

কলকাতা, ৮ অক্টোবর:- শেষ লগ্নে ফের একবার তুঙ্গে উৎসবের রোশনাই। ঢাকের বোল, ধুনুচি নাচ, মঙ্গলারতী, শঙ্খধ্বনিতে ত্রয়োদশী সন্ধ্যায় ফিরে এলো সপ্তমীর আমেজ। তবে গোটা শহর নয় এই ছবি শুধুমাত্র মধ্য কলকাতার রেড রোডে। কলকাতা, হাওড়া ও লাগোয়া শহরতলীর বাছাই পুজো কমিটি নিয়ে শনিবার সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল দুর্গাপুজো কার্নিভালের। অতিমারি কাটিয়ে দুবছর পর এই কার্নিভাল নিয়ে মানুষের আগ্রহ তো ছিলই। তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সব মিলিয়ে রেড রোড এবং আশপাশের অঞ্চল দুপুর থেকেই চলে গেছিল উৎসাহী মানুষের দখলে। বিকেল চারটেয় আকাশবাণী ভবন থেকে ধর্মতলা শহীদ মিনার চত্বর সবই চলে যায় জনতার দখলে। ওদিকে রেড রোডের মূল মঞ্চ ও তার চারপাশ পরিণত হয় চাঁদের হাটে। অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, শিল্পজগতের বহু তারকা। কার্নিভাল শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল বিকাল সাড়ে চারটে। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই রেড রোডে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাত ১১টা পর্যন্ত এই কার্নিভালের অনুষ্ঠান চলবে। জাঁকজমক। এদিন এই অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে নৃত্য পরিবেশন করেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচের স্কুল দীক্ষা মঞ্জরীর ছাত্র ছাত্রীরা। প্রসঙ্গত দুর্গা পুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার পর এই প্রথম কার্নিভাল হচ্ছে কলকাতায়। এই কার্নিভালে অংশ নিয়েছে ৯৪টি পুজো কমিটি। প্রত্যেক পুজো কমিটির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪ মিনিট করে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পুজো কমিটিগুলিকে নিজেদের পারফর্ম করতে হবে। অনুষ্ঠান শুরু হয় কলকাতা পুলিশের ডেয়ার ডেভিল বাহিনীর স্টান্টবাজি দিয়ে। কখনও চলন্ত বাইকে সপরিবারে দুর্গার অভিনয় করেন পুলিশ কর্মীরা, কখনও বাইকে সওয়ার হয়েই ঢাক-ঘণ্টা বাজিয়ে আরাধনা। য়ার মঞ্চে বসে গোটা বিষয়টি উপভোগ করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা এদিন নৃত্য পরিবেশন করেন। ইতিমধ্যে রেড রোডের কার্নিভালের নিজেদের পরিবেশনা তুলে ধরেছে বডিগার্ডস লাইন আবাসিক দুর্গাপুজো কমিটি, দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীন পুজো, বেহালা নতুন দল, এই পুজোর এবারের থিম ছিল – আশ্রয়ের আশ্বাস।

বেহালা নতুন দল আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনা করে। প্রসঙ্গত দক্ষিণ কলকাতার এই পুজোর নৃত্যের সঙ্গীতে সুর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথাও স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। বেহালা নতুন দলের পর পরিবেশনা তুলে ধরে ভবানীপুর ৭৫ পল্লি। এ বছর তাদের থিম ছিল ‘বেঁচে থাকুক।’ পুজো কমিটির তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘জাগো তুমি, জাগো’ গান বাজানো হয়। এরপর নিজেদের পরিবেশনা তুলে ধরে সিংহি পার্ক পুজো কমিটি। নারায়ণ দেবনাথের কালজয়ী সৃষ্টি নিয়ে এ বছর সিংহ পার্কের থিম করা হয়েছে। রেড রোডে এদিন নিজেদের পরিবেশনা তুলে ধরে কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় পুজো শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবও। শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের এবারের থিম ছিল ভ্যাটিকান সিটি। কার্নিভালে শ্রীভূমির হয়ে নৃত্য পরিবেশনা করেন ঐন্দ্রিলা সেন এবং অঙ্কুশ হাজরা। কার্নিভালের অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত থেকে পুজো কমিটির পরিবেশনাগুলি উপভোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।