এই মুহূর্তে

বাগুইহাটির জোড়া ছাত্র হত্যার ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

কলকাতা, ৭ সেপ্টেম্বর:- বাগুইআটির জোড়া ছাত্র হত্যার ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তরুণ ওই দুই ছাত্রের মৃত্যুতে যুগপৎ শোকাহত ও ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত দোষীদের পাকড়াও করে কঠোর সাজা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী জোড়া খুনের মামলার তদন্তের দ্বায়িত্ব সিআইডির হাতে ন্যস্ত করেছেন। স্থানীয় থানার আইসির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর নজরদারি চালাবেন। উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পুলিশকে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানোর ওপরেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। বুধবার নবান্ন সভা ঘরে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে রাজ্য স্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সূত্রে খবর,বৈঠকের আগেই রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যকে নিজের ঘরে ডেকে বাগুইআটি কাণ্ড নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে তুলোধোনা করেন তিনি। পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিআইডিকে ওই ঘটনার তদন্তর দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এর পরে নবান্নে এই বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কলকাতার মেয়র তথা পুরো ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় মর্মাহত। তিনিই ওসিকে ক্লোজ করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, পুলিশের অনেক আগেই সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। ফিরহাদ হাকিম আরও বলেন, বাগুইআটিতে যে ঘটনা ঘটেছে তা শিউরে ওঠার মত।

সরকার হতভাগ্য দুটি পরিবারের পাশে সব রকম ভাবে থাকবে।পড়ে বাগুইআটির ওসি কল্লোল ঘোষএকই সঙ্গে ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বাগুইআটি থানার এক এএসআই পদমর্যাদার অফিসারকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে৷প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ বাড়িতে বসে থাকছে। ভাবছে সেখান থেকেই অফিস চলবে। কোনও কোনও পুলিশ কিছু কাজ করছে আর তার জন্য পার্টির বদনাম হচ্ছে। মধ্যরাতে বিভিন্ন এজেন্সি অনেকের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। পুলিশের কাছে কোনও খবর থাকছে না।” সূত্রের খবর প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সামনেই এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী৷মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন বিধাননগরের পুলিশ সুপার সুপ্রতিম সরকারও। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌এত অবহেলা কেন।’‌ বাগুইআটি কাণ্ড নিয়ে মমতার এদিনের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি এই বৈঠক থেকেই উত্তর ২৪ পরগণার জেলাশাসককে সব পুলিশ জেলার এসপি, কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত বৈঠকে বসে কোন কমিশনাকেট, পুলিশ জেলা কেমন কাজ করছে, কোথায় কী সমস্যা রয়েছে তা পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিহত দুই কিশোরের বাড়িতে যান রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অদিতি মুন্সী ও পুরপিতা দেবরাজ চক্রবর্তী। বিধাননগরের পুলিশ সুপার সুপ্রতিম সরকারও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি জানান সিআইডি ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে মন্ত্রী সুজিত বসু সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এখানে এসেছি। অতনুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের জানিয়েছি, আমরা সর্বদা পাশে রয়েছি। সমস্তরকমের সহযোগিতা করব। দোষীরাও অবশ্যই শাস্তি পাবে।” একইসঙ্গে সুজিত বসু এদিন বলেন, “যখন ছেলেরা নিখোঁজ ছিল, তখনও পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। দোষীরা খুব শীঘ্রই গ্রেফতার হবে।” বাগুইআটি জোড়া খুনের ঘটনায় মুল অভিযুক্তের খোঁজ করছে সিআইডি। ওই মামলায় অভিযুক্ত অন্য তিনজনকে এদিন ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। বুধবার ধৃত ওই তিনজনকে বারাসত আদালতে তোলা হলে তাদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাগুইআটি জোড়া খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ মোট চার জনকে গ্রেফতার করে। গতকাল এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে বারাসত আদালতে তোলার পর আজ আরও তিন অভিযুক্তকে নিয়ে আসা হয়। ধৃত তিন জনের নাম মহম্মদ শামিম আলি, সাহিল মোল্লা, দিব্যেন্দু দাস।বাগুইআটি জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজন কে বারাসত আদালতে নিয়ে আসা হলো। অভিজিৎ বসুকে গতকাল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৪ দিনের পিসি হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৬৫, ৩৬৩, ৩০২, ২০১, ৩৬৪ এ, ১২০বি, ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে না দাঁড়ানোয় অবশেষে জেলা লিগাল এড থেকে আইনজীবী দেওয়া হয় (স্টেট ডিফেন্স)।