সুদীপ দাস, ৮ আগস্ট:- তথাকথিত নেশাভাঙ বলতে যা বোঝায় তা করে না সে। তবে অন্য এক নেশা তাঁর আছে। বৌ-ছেলেকে মারার নেশা! শুনে অনেকেই হয়তো ভ্রু-কোঁচকাবেন। কিন্তু আদতে এটাই সত্যি। বাবার পাশবিক অত্যাচারে চারদিন ধরে ঘরছাড়া থাকার পর অবশেষে এক সহপাঠীর সহযোগীতায় চুঁচুড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আরোগ্যর দ্বারস্থ হল ১৪বছরের কিশোর। কিশোর বয়ান শুনলে যে কেউ স্তম্ভিত হয়ে যাবে। হুগলীর কৃষ্ণপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা তথা চুঁচুড়ার রামকৃষ্ণ শিক্ষানিকেতনের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র ওই কিশোরের অভিযোগ তাঁর মাকে নেহাত সন্দেহের বশে প্রতিদিন বেধরক মারধর করে বাবা অশোক দাস। মারধরের হাত থেকে বাদ পরে না সেও। দিন কয়েক আগে ছেলের হাতে দড়ি বেঁধে চালের বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে বেধরক মারধর করে অশোক। দীর্ঘক্ষন দড়িতে ঝুলিয়ে রাখায় হাতে দড়ি বসে গিয়ে দগদগে ঘা হয়ে যায়। পেশায় রাজমিস্ত্রী অশোক দাস বিকেলে কাজ থেকে ফিরলেই শুরু হয় অত্যাচার। বছর ৫-এর ছোট ছেলেকে সেভাবে কিছু না বললেও ১৪ বছরের বড় ছেলেকে সহ্যই করতে পারে না অশোক। গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
দিনকয়েক আগে ছেলেকে যখন বাবা দড়িতে ঝুলিয়ে মারধর করছিল তখন বাঁধা দিতে গেলে স্ত্রীর মুখে কাপড় গুঁজে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে লোহার রড দিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। এরপর বাবার অত্যাচার থেকে নিজে ও মাকে বাঁচাতে দিন চারেক আগে ঘরছাড়ে সপ্তম শ্রেনীর ওই ছাত্র। দিনচারেক রবীন্দ্রনগরে দিদার বাড়িতে গিয়ে ওঠে সে। সেখানেও বাবা ফোন করে ছেলেকে হুমকি দেয়। বলে এবার বাড়িতে এলে পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবো। ভয়ে আর ঘরে ফেরেনি সে। তবে বাবার হাত থেকে যে মাকেও বাঁচাতে হবে। সেই তাগিদে সহপাঠী শুভম দে’র সাথে কথা বলে সে। শুভমের সহযোগীতায় অত্যাচারিত কিশোর সোমবার চুঁচুড়া আরোগ্যর দ্বারস্থ হয়। আরোগ্যর পৃষ্ঠপোষক ইন্দ্রজিৎ দত্ত ওরফে বটাকে গোটা ঘটনার কথা জানায় সে। আরোগ্যর স্বেচ্ছাসেবকরা কৃষ্ণপুরের বাড়িতে গিয়ে অশোকের স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে আরোগ্যর দপ্তরে নিয়ে আসে। ছেলে ও নিজের উপর সমস্ত অত্যাচারের কথা স্বীকার করেন অশোকের স্ত্রী। এরপরই বটাবাবু চুঁচুড়া থানা ও চাইল্ড লাইনকে বিষয়টি জানায়। অবশেষে চুঁচুড়া থানার পুলিশ এসে অত্যাচারিত মা ও ছেলেদের থানায় নিয়ে যায়। এদিন ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন স্ত্রী-পুত্রের উপর এভাবে অত্যাচার ভাবা যায়না। আমরা এই পরিবারটির পাশে থাকবো।