এই মুহূর্তে জেলা

১০ মিটার এয়ার রাইফেলের মিক্সড টিম ইভেন্টে সোনা জিতলেন বৈদ্যবাটির মেহুলি।

সোজাসাপটা ডেস্ক, ১৩ জুলাই:- স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে যখন সারা দেশ জুড়ে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব চলছে তখন বিশ্ব রাইফেল শুটিং প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দিল বৈদ্যবাটির মেহুলি ঘোষ। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় মিক্সড ইভেন্টে তুষার মানকে সঙ্গে নিয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল শুটিংয়ে সকলকে পিছনে ফেলে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিল বঙ্গ তনয়া মেহুলি। বৈদ্যবাটির বাড়িতে জয়ের খবর আসতেই রীতিমতো খুশির হাওয়া ঘোষ পর অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অভিনব বিন্দ্রাকে শুটিংয়ে সোনার পদক জিততে দেখে বাবার কাছে বায়না শুরু করেছিল শুটিং শিখবে বলে। আধা সরকারি সংস্থায় কর্মরত বাবা নিমাই ঘোষের সেই আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। তাই মেয়ের বায়নাকে প্রথমে গুরুত্ব দিতে চান নি। দিদিমা মঞ্জু পাল বলেছিলেন নাতনির শুটিং শিক্ষার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করবেন। রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল মেহুলি। শেষ পর্যন্ত ১৩ বছর বয়সে শ্রীরামপুর রাইফেল শুটিং ক্লাবে শুটিং প্রশিক্ষণের হাতেখড়ি। সেখান থেকে জয়দীপ কর্মকারের হাত ধরে নিউটাউনে প্রশিক্ষণ শুরু করে মেহুলি। গত বছর আরো উন্নত ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে হায়দ্রাবাদে বিশ্বখ্যাত শুটার বিবস্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। আর তার পরেই বঙ্গ তনয়ার হাত ধরে বিশ্বের দরবারে আবার সবার সেরা ভারত।

২০১৪-য় স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আমেদাবাদে প্রি ন্যাশনালে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে ন্যাশনালের জন্য সিলেক্ট হন। কিন্তু ন্যাশনালে সে বছর কোন স্থান পান নি মেহুলি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে ফের প্রশিক্ষণে মনোযোগ দেয়। এরপর ২০১৭-য় ন্যাশনাল ইউথ জুনিয়ার এন্ড সিনিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপে একই সঙ্গে নয়টি পদক জয় করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর একের পর এক সাফল্য স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে গেছে তাকে। মঙ্গলবার ব্যক্তিগত ১০ মিটার রাইফেল শুটিং ইভেন্টে খুব অল্পের জন্য ফাইনালে উঠতে পারে নি মেহুলি। মা তার অনুপ্রেরণা। রাতেই মাকে ফোন করে জানায় মা একটুর জন্য পারলাম না। মা মিতালী ঘোষ প্রত্যুত্তরে মেয়েকে বলেন পিছনে তাকিও না। সামনের দিকে তাকাও। আগামীকালের ইভেন্টে মন দাও। এরপরই অসম্ভব রকমের জেদ কাজ করে মেহুলির। বুধবার তুষার মানকে সঙ্গে নিয়ে মিক্সড ইভেন্টের দশ মিটার রাইফেল শুটিংয়ে সকলকে পিছনে ফেলে সোনা জিতে নেয় মেহুলি। মেহুলির বাবা নিমাই ঘোষ জানান দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে তার স্ত্রী মিতালী ঘোষ নিউটাউনে মেয়ের প্রশিক্ষণ চলাকালীন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অ্যাকাডেমির বাইরে চায়ের দোকানে বসে থাকতেন। তিনি অফিস শেষে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতেন। আজকে মায়ের এই পরিশ্রমের কোন বিকল্প হয় না। এটা মা-মেয়ে দুজনেরই স্বপ্ন পূরণ।