এই মুহূর্তে জেলা

ঘরের আলমারিতে থাকা চেকের পাতা দিয়েই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা, অবাক ‘চেক-জালিয়াতি’ চক্র ফাঁস চুঁচুড়ায়!

সুদীপ দাস, ২৭ জুন:- আপনার ঘরেই রয়েছে চেক-বই। অথচ সেই বইতে থাকা একটি পাতা থেকে হঠাৎ করেই কয়েক লক্ষ টাকা উঠে গেল। আপনি ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না। অথচ যখন মোবাইলে মেসেজ এলো কিংবা বই আপডেট করে বিষয়টি জানতে পারলেন তখন তো আপনার চক্ষু চড়কগাছ। এটা কি করে সম্ভব। কোন ফোন এলো না, কোন ওটিপি কিংবা ডেবিট কার্ডের নাম্বার কাউকে জানালেন না, সই করা চেকের পাতাও কাউকে দিলেন না অথচ টাকা উঠে গেল আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে। অবাক হওয়াই বিষয়। সত্যিই অবাক হয়েছিলেন ব্যান্ডেল সাহাগঞ্জের বাসিন্দা সনৎ কুমার মন্ডল। গত মাসের শেষে সপ্তাহে সনৎবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩লক্ষ ৯০হাজার টাকা উঠে যায়। বিষয়টি নিজের মোবাইলে আসা মেসেজ থেকে তিনি জানতে পারেন। এরপরই মাথায় বাজ ভেঙে পরে বেসরকারী সংস্থার কর্মী সনৎবাবুর। চুঁচুড়ার আখনবাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সনৎবাবুর অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা উঠে যায়। শুরু হয় সেই ব্যাঙ্কে ছোটাছুটি। টানা কয়েকদিন ব্যাঙ্কে ছুটে তিনি জানতে পারেন ৭৫৮৮৭২-নম্বরের একটি চেক থেকে সেই টাকা উঠেছে। অথচ সেই নাম্বার চেকটি সনৎবাবুর বাড়িতেই রয়েছে। অবশেষে চলতি মাসের ১১তারিখ চুঁচুড়ায় চন্দননগর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম শাখায় এবিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন সনৎবাবু।

সেই অভিযোগের তদন্তে নেমেই পাঁচদিন পর ১৬তারিখ উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে সুরজ হাসান ওরফে মিরাজুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উল্লেখ্য সুরজ হাসানের অ্যাকাউন্টেই সনৎবাবুর টাকা চেক মারফত ট্রান্সফার হয়েছিল। সুরজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ২১শে জুন আমডাঙ্গার দুই বাসিন্দা মনসুর হাসান সাহাজি ও ইমরান হাসান এবং হাবরার অশোকনগরের দুই বাসিন্দা নজিবুল ইসলাম ও মহঃ জাকির হুসেনকে গ্রেফতার করে। এরপর ২২শে জুন বারাসাতের আনন্দপল্লীর বাসিন্দা বাবুন মজুমদারকে গ্রেফতার করে। বাবুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অস্থায়ী কর্মী। কাজের সূত্রে বাবুনের কাছে সাধারনের চেকের ডিটেলস থাকতো। যা অনায়াসেই সে জালিয়াতি চক্রের হাতে পৌঁছে দিত। এরপর গত ২৪তারিখ মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ ঘোষ ও বাগুইহাটির বাসিন্দা অর্ণব মন্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত আটজন মিলেই এই চেক জালিয়াতি চক্র চালাতো। সনৎবাবুর ৩লক্ষ ৯০হাজার টাকা নকল চেক মারফত সুরজ হাসানের অ্যাকাউন্টে নিয়ে সেই টাকা মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ধৃতদের অ্যাকাউন্টে ভাগাভাগি করে তা নিজেরাই এটিএম কার্ড দিয়ে তুলে নিচ্ছিলো। তবে এদের সাথে ব্যাঙ্কের কোন কর্মী কিংবা আরও কেউ যুক্ত কিনা সেবিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। এদিন ডিসি সদর নিধিরাণী সাংবাদিকদের বলেন ধৃতদের কাছ থেকে ১১টি স্মার্ট ফোন বিভিন্ন ব্যাঙ্কের বহু ভূয়ো চেক, নকল চেক তৈরীর জন্য ব্যাবহৃত প্রিন্টার সহ সনৎবাবুর খোয়া যাওয়া ৩লক্ষ ৯০হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। ধৃত আটজনকেই আপাতত পুলিশ হেফাজতে রেখে তদন্ত চালানো হচ্ছে।